স্বামীজি থেকে নেতাজি ছুঁয়ে মোদীর রোড-শো কলকাতা উত্তরে, ‘ঐতিহাসিক’ চেহারা দিতে চায় রাজ্যের পদ্মশিবির

রাজ্যে প্রতিটি দফার ভোটের আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলায় এসেছেন। শুরু করেছিলেন ভোট ঘোষণার আগে থেকেই। আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগরে জোড়া সভা করেছেন। বাকি জায়গায় একটি মঞ্চ থেকে একাধিক প্রার্থীর হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন। তবে রাজ্যে একটিও রোড-শো করেননি।

এ বার কলকাতায় হতে চলেছে মোদীর শোভাযাত্রা। সব কিছু ঠিক থাকলে মোদীর ওই কর্মসূচি হবে আগামী মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ। ইতিমধ্যেই তাঁর রোড-শো কোন পথে যাবে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তা চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজ্য বিজেপি। মোদীর নিরাপত্তা-সহ অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখেই ঠিক হয়েছে যাত্রাপথ। শেষ মুহূর্তে কোনও রদবদল না হলে মঙ্গলবার মোদীর রোড-শো শুরু হবে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি থেকে। শেষ শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে।

উত্তর কলকাতায় বিধান সরণি এবং বিবেকানন্দ রোডের সংযোগস্থলের অনতিদূরেই স্বামীজির জন্মভিটে। সেখানে স্বামীজির মূর্তিতে মালা দিয়ে শুরু হবে মোদীর যাত্রা। এর পরে বিধান সরণি দিয়েই মোদীর রোড-শো এগিয়ে যাবে শ্যামবাজারের দিকে। ডান দিকে হেদুয়া পার্ক, বাঁ দিকে বেথুন কলেজ এবং স্কুলকে রেখে এগিয়ে যাবেন মোদী। এখানে ডান দিকে অভেদানন্দ রোড ধরে একটু গেলেই আরএসএসের রাজ্য সদর দফতর। তবে সে দিকে যাবে না মোদী-শো। বিধান সরণি ধরে সোজা এগিয়ে যাবে স্টার থিয়েটারের দিকে। হাতিবাগান হয়ে পাঁচ নম্বর রুটের ট্রামলাইন ধরে সোজা শ্যামবাজার।

মোট পথ ২.২ কিলোমিটার। গাড়িতে গেলে মিনিট ১৫ লাগে। কিন্তু মোদীর ওই পথ পার হতে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। এখনও সময়সূচি চূড়ান্ত না হলেও রাজ্য বিজেপির যা পরিকল্পনা, তাতে দলের লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থক ওই রোড-শোয়ে যোগ দেবেন। মোদীর জন্য সুদৃশ্য রথের পাশাপাশি বাংলার দুই প্রধান নেতা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও থাকবেন কোনও উঁচু গাড়িতে। সেই সঙ্গে অবশ্যই থাকবেন কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী তাপস রায়।

ইতিমধ্যেই বিজেপির মধ্যে তাপসের ‘ভাগ্য’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই পছন্দের আসনে প্রার্থী। এর পরে মোদীর কলকাতায় প্রথম রোড-শো তাঁরই প্রচারে। তবে মোদীর রোড-শোয়ের আগে আরও একটি মিছিল হচ্ছে শহরে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার জবাব দিতে শুক্রবার একটি পদযাত্রা হচ্ছে সেই কলকাতা উত্তরেই। বাগবাজারে মায়ের (সারদাদেবী) বাড়ি থেকে সাধু-সন্তেরা খালি পায়ে হেঁটে আসবেন বিধান সরণি এবং বিবেকানন্দর রোডের মোড়ের অদূরে স্বামীজির বাড়ি পর্যন্ত। সেই মিছিলের যেখানে শেষ, সেখান থেকেই যাত্রা শুরু হবে মোদীর।

প্রসঙ্গত, মমতার ‘সন্ন্যাসী’ মন্তব্যের পরে পাল্টা সরব হয়েছেন মোদী। রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথাও তুলে ধরেছেন। সেই সূত্রে মোদী বাংলায় প্রচারে এসে বার বার রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে স্বামী বিবেকানন্দের সম্পর্কের কথা বলেছেন। এ বার সেই স্বামীজিকে শ্রদ্ধা জানিয়েই হবে তাঁর কলকাতা উত্তরের রোড-শো। মনে করা হচ্ছে, স্বামীজি এবং রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে আপামর বাঙালির আবেগ ছোঁয়ার লক্ষ্য রোড-শো শুরুর স্থান নির্বাচনে গুরুত্ব পেয়ে থাকতে পারে।

কর্মসূচি সফল করতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পদ্মশিবিরে। বাংলার ঢাক থেকে আদিবাসী নৃত্য— সবই রাখার পরিকল্পনা বিজেপির। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মনীষীর ট্যাবলোও থাকবে। মঙ্গলঘট নিয়ে যাবেন লাল পাড়, সাদা শাড়ি পরা মহিলারা। এ ছাড়াও নানা চিত্তাকর্ষক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বুধবার প্রশ্ন করা হলে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘‘এমন আয়োজন হচ্ছে যে, কলকাতা অতীতে এমন রোড-শো দেখেনি। ঐতিহাসিক চেহারা নেবে মোদীর এই যাত্রা। বাংলার রাজনীতিতেও নতুন দিনের সূচনা হবে আগামী মঙ্গলবার।’’

প্রসঙ্গত, কলকাতায় এই প্রথম মোদীর রোড শো-হতে চলেছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে রোড-শো করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। লক্ষ্য ছিল স্বামীজির বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার। যেখান থেকে এ বার মোদীর রোড-শো শুরু হবে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই বিধান সরণিতে বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে। তাতে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। সে নিয়ে অনেক বিতর্কও হয়। সে বার কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহের অভিযোগ ছিল, ‘পরিকল্পিত’ ওই গোলমাল না হলে তাঁর জয় নিশ্চিত ছিল। তবে মঙ্গলবার মোদী সেই পথ মাড়াচ্ছেন না।

বিজেপি সূত্রে প্রথমে জানা গিয়েছিল, কলকাতা উত্তরের পাশাপাশি দমদম লোকসভার জন্যও রোড-শো করবেন মোদী। দুই আসন মিলিয়ে হবে ‘রুট’। কিন্তু পরে ঠিক হয়, মোদীর মঙ্গলের প্রচার শুধু কলকাতা উত্তরের জন্যই থাকুক। কলকাতা দক্ষিণের জন্য মোদীর প্রচারসূচি এখনও ঠিক হয়নি। জানা গিয়েছে, একেবারে শেষ লগ্নে কলকাতা দক্ষিণ ও যাদবপুর আসন মিলিয়ে একটি সভা করতে পারেন মোদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.