গুজরাতে সফল, মুম্বইয়ে ব্যর্থ! অধিনায়ক হার্দিকের ‘কথা ও কাহিনি’

আইপিএলের সবচেয়ে বড় দলবদলটা বোধ হয় এ বারেই হয়ে গিয়েছে। আগামী বছর রোহিত শর্মা যদি অন্য কোনও দলে যান তাতেও এতটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গুজরাত টাইটানসের অধিনায়ক হিসাবে এক বার ট্রফি জয়, অন্য বার ফাইনাল খেলার পর হার্দিক পাণ্ড্য ফিরে যান পুরনো দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। যে খবর চমকে দিয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। আরও চমকের যে বাকি ছিল তা তখন বোঝা যায়নি। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই রোহিতকে সরিয়ে অধিনায়ক করা হয় হার্দিককে। কিন্তু এ বারের আইপিএলের পয়েন্ট তালিকায় শেষ দল হিসাবে থেকে গেল মুম্বই। ব্যর্থ হার্দিক। গুজরাতের সফল অধিনায়ক কেন মুম্বইয়ে এসে পারলেন না?

রোহিত মুম্বইকে পাঁচ বার আইপিএল জিতিয়েছিলেন। তিনি বড় হয়েছেন মুম্বইয়েই। সেখানকার ঘরের ছেলে তিনি। আইপিএল মানে শহর বনাম শহরের লড়াই। সেখানে নিজের শহরের ছেলেকে অধিনায়ক হিসাবে পেলে সমর্থকদের আবেগ জড়িত থাকে। যদি না অধিনায়কের নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হয়। মুম্বই সমর্থকদের সেই আবেগেই ধাক্কাটা লাগে। ঘরের ছেলে রোহিতকে সরিয়ে গুজরাতের হার্দিককে ‘রাজা’ করা হয় মুম্বইয়ের। কিন্তু সেই মুকুটটা সোনার বদলে কাঁটার হয়ে যায়। প্রথম ম্যাচ থেকেই সেটা বুঝে যান হার্দিক।

পুরনো দল গুজরাতের ঘরের মাঠ আমদাবাদে খেলতে নেমেছিল মুম্বই। হার্দিকের ঘরের মাঠও আমদাবাদ। কিন্তু সেই মাঠেই বিদ্রুপ শুনতে হয় মুম্বই অধিনায়ককে। তবুও প্রাক্তন সমর্থকদের কটাক্ষ এক রকম ছিল। ১ এপ্রিল ওয়াংখেড়েতে খেলতে নেমেও বিদ্রুপ শুনতে হয় হার্দিককে। যা অবাক করে দেয় সকলকে। মুম্বই অধিনায়ককে ওয়াংখেড়ের মাঠে আওয়াজ দেওয়া হচ্ছে। এমন ঘটনা আইপিএল আগে দেখেনি।

শুরুর এই ধাক্কাই হার্দিকের মনঃসংযোগ নষ্ট করে দেয় বলে মত সুনীল গাওস্করের। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “শুরুটা ভাল হয়নি হার্দিকের। মুম্বইয়ের অধিনায়ক হওয়ার পরেই অনেক নেতিবাচক ঘটনা ঘটে। দিনের শেষে ও তো মানুষ, এটার একটা প্রভাব মনের উপর পড়ে। কেউ সমালোচনা শুনতে পছন্দ করে না। আমার মনে হয় হার্দিকের উপরেও প্রভাব পড়েছিল। প্রথম দিকের ম্যাচগুলিতে হার্দিক যদি রান করত বা উইকেট নিত তা হলে ব্যাপারটা অন্য রকম হত। কিন্তু ও সেটাও পারেনি। তাই চাপ আরও বৃদ্ধি পায় হার্দিকের জন্য।”

হার্দিক এ বারের আইপিএলে ১৪ ম্যাচে করেছেন ২১৬ রান এবং নিয়েছেন ১১ উইকেট। ২০২১ সালের পর এটাই হার্দিকের সবচেয়ে খারাপ পরিসংখ্যান। কোনও অর্ধশতরান নেই। নতুন বলে বল করেছেন। ইনিংসের মাঝে বল করেছেন। ডেথ ওভারেও বল করেছেন। কিন্তু সাফল্য আসেনি। ব্যাট হাতেও ম্যাচ জেতানো ইনিংস আসেনি। সেই সঙ্গে যশপ্রীত বুমরাকে ঠিক মতো ব্যবহার করা হয়নি বলেও সমালোচনা হয়েছে। গোটা আইপিএলে মুম্বই জিতেছে মাত্র চারটি ম্যাচ। সব মিলিয়ে এ বারের আইপিএল হার্দিক খুব তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবেন।

মুম্বই হার্দিককে দলে নিয়েছিল মিডল অর্ডারকে শক্তিশালী করতে। সেই সঙ্গে ফিনিশার হিসাবে কাজ করতে পারতেন। গুরুত্বপূর্ণ সময় বল হাতে উইকেট নিতেও দক্ষ হার্দিক। গুজরাতের হয়ে সেটাই তাঁকে করতে দেখা গিয়েছিল। আবার চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে রানও করেছিলেন। কিন্তু মুম্বইয়ে এসে সেগুলোর কোনওটাই হল না। ডুবল হার্দিকের পুরনো দল গুজরাতও। তারাও অধিনায়ক হার্দিককে হারিয়ে ভারসাম্য হারাল। প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল পর পর দু’বার ফাইনাল খেলা গুজরাত।

Hardik Pandya

উল্টো দিকে হার্দিককে নেওয়ার জন্য মুম্বই ছেড়ে দেয় ক্যামেরন গ্রিনকে। তিনি তিন নম্বরে ব্যাট করতেন। হার্দিক সেটা করতে পারেন না। আবার পেসার হিসাবে গ্রিন যতটা ভয়ঙ্কর, হার্দিক ততটা হতে পারলেন না। ফলে ক্ষতি হল মুম্বইয়ের।

এই সব কিছুর মধ্যে কেভিন পিটারসেন মনে করছেন হার্দিকের ব্যর্থ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে কথা। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “হার্দিককে টসের সময় দেখছিলাম খুব হেসে হেসে কথা বলছে। কিন্তু ও ঠিক নেই। আমি বলছি ও ঠিক নেই। এটা মুম্বইয়ের ঘরের মাঠ। সেখানে ওকে টিটকিরি দেওয়া হচ্ছে। এখানে গোটা মাঠ চেন্নাইয়ের জন্য চিৎকার করছে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন। ও তো মানুষ। ওর আবেগ আছে। আমি জানি এমন পরিস্থিতিতে কেমন লাগে। গাওস্করও জানেন। মায়ান্তিও জানে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন। সেটার প্রভাব পড়ছে হার্দিকের উপর।”

কথা দিয়ে সব কাহিনি ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন হার্দিক। কিন্তু আইপিএল শেষে তাঁর ব্যর্থতা স্পষ্ট। কিছুই ঢাকতে পারলেন না ভারতের সহ-অধিনায়ক। কিছু দিন পর যে রোহিতের ডেপুটি হিসাবেই খেলতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.