ভিন্ রাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকেরা কম আসছেন ভোট দিতে? চার দফা দেখার পরে শাসক তৃণমূলে চিন্তা?

ভিন্ রাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা সকলে কি ভোট দিতে ঘরে ফিরেছেন? ফিরছেন? চার দফা ভোট হয়ে যাওয়ার পরে এ নিয়ে খানিক চিন্তায় বাংলার শাসকদল তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফায় ভোট হয়েছিল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি আসনে। সেই আসনগুলিতে খুব বেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা না থাকায় ভোটদানে সে ভাবে প্রভাব পড়েনি। কিন্তু দ্বিতীয় দফা থেকেই ভোটদান কম হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে সব মহলে। শাসক শিবির সূত্রের খবর, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানা যাচ্ছে, বালুরঘাট, রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর এবং দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর ও বহরমপুরের মতো লোকসভা আসনের ভোটার তালিকায় নাম থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশ ভোট দিতে বাড়ি ফেরেননি।

ওই সব লোকসভা কেন্দ্রে বাস মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের। যাঁদের বেশিরভাগ দক্ষিণ ভারতে নির্মাণশ্রমিক হিসাবে কাজ করে থাকেন। তাঁরা বছরে কম করে দু’বার বাড়ি আসেন। ভোটের মরশুমেও তাঁরা বাড়িতে ফেরেন বলেই জানিয়েছেন মালদহের এক তৃণমূল নেতা। কিন্তু এ বারে তার ব্যত্যয় হয়েছে বলেই ওই নেতার বক্তব্য। উত্তরবঙ্গ-সহ মুর্শিদাবাদের ওই বড় অংশের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি না ফেরার কারণও জানতে পেরেছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। শাসকদলের উত্তরবঙ্গের নেতাদের মতে, গত মার্চ মাসে ইদের ছুটি নিয়ে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরেছিলেন। রমজান মাসের উপবাস পালনের শেষে পরিবারের সঙ্গে ইদ উদযাপন করতে এসেছিলেন তাঁরা। উৎসবের শেষে তাঁরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছেন। ১০-১১ এপ্রিল ছিল ইদ। সেই উৎসব পালন করে অনেকেই হয় এপ্রিল মাসের শেষে বা মে মাসের গোড়ায় নিজেদের কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছেন। তবে রাজ্যে প্রথম তিনটি দফার ভোট ছিল যথাক্রমে ১৯ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল এবং ৭ মে। শাসক শিবিরের একটি অংশের বক্তব্য, ওই সময়ে যাঁরা ছুটি কাটিয়ে বাড়ি যাননি, তাঁরা ভোটে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ১৩ মে চতুর্থ দফায় যাঁদের ভোট ছিল, সেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভোটে বাড়ি আসার ছুটি পাননি। তাই তাঁরা অনুপস্থিত থেকেছেন।

মুর্শিদাবাদ জেলার এক সংখ্যালঘু নেতার কথায়, ‘‘অনেকেই গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় ভোট দিতে ছুটি নিয়ে এসেছিলেন। জুন-জুলাই মাসে সেই ভোটের সময় ছুটি নিয়েও অনেক পরিযায়ী শ্রমিক ভোটের কারণে বাড়িতে থেকে গিয়েছিলেন। তাই লোকসভা ভোটে আর তাঁরা লম্বা ছুটি পাননি। সেই কারণেই বড় অংশের পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফিরে ভোট দেওয়া সম্ভব হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকরা যে ভাবে আর্থিক ধাক্কা খেয়েছিলেন, তাতে বার বার ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরাও তাঁদের কাছে আর্থিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তাঁরা ভোট দিতে আসেননি বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’’ পরিযায়ী শ্রমিকদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু মুসলমান হওয়ায় তাঁরা বিজেপি বিরোধী বলেই অভিমত তৃণমূলের। ফলে সেই ভোট তাঁদের ঝুলিতে না-ও পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের।

তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গের ইটাহারের বিধায়ক মোশারাফ হোসেন বলেন, ‘‘আমার কেন্দ্রে ২৮ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক এ বার ভোট দিতে আসেননি। তবুও আমরা বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে যাব। কিন্তু ওই শ্রমিকরা যদি বাড়ি ফিরে ভোট দিতেন, তা হলে তৃণমূল আমার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অনায়াসে ৫০ হাজারের বেশি লিড পেতে পারত।’’ প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ইটাহার থেকে প্রথম বার প্রার্থী হয়ে মোশারফ প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে জয়ী হন। সেই ভোটে পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশ বাড়ি ফিরে শাসকদলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন বলেই জানিয়েছেন ওই তৃণমূল বিধায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.