ভারত মহাসাগরের মধ্যে আফ্রিকার কূলে ছোট্ট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র মরিশাস। অনেকগুলো দ্বীপের সমন্বয়ে দেশটি গঠিত। আফ্রিকা মহাদেশের একমাত্র হিন্দু গরিষ্ঠ দেশ। জনসংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ। যেন সাগরপারের খুদে ভারত। দ্বীপগুলো পরিপূর্ণ সুন্দর সুন্দর মন্দিরে। ইন্দোনেশিয়ার বালি যেমন হিন্দু মন্দিরের জন্য বিখ্যাত তেমনি মরিশাস। এই দুই দেশের পর্যটনও হিন্দু মন্দির-নির্ভর।
বিদেশিরা এখানে আসেন হিন্দু মন্দির দর্শন করতে। যা হোক এবারের দুর্গা পুজো ছিল মরিসাসবাসীর কাছে অত্যন্ত ‘স্পেশাল’। হিন্দুদের আপন দেশ ভারতেরই কোনও অঙ্গরাজ্যে যখন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনে বিধিনিষেধ আরোপিত হয়, কালী পুজোয় বাজি ফোটানোর উপর পড়ে বিচারালয়ের নিষেধাজ্ঞা, রামমন্দির নির্মাণে বিতর্ক ওঠে চরমে, ঠিক সেইসময় মরিশাস কামাল করে দিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থায়ী দুর্গা প্রতিমার শুভ উদ্বোধন করে।
১৮৮৭ সালে একজন পণ্ডিত প্রথম এখানকার ‘গঙ্গাতালাও’ আবিষ্কার করেন । এটি দেখতে অনেকটা গঙ্গা নদীর মতো হওয়ায় তিনি ভারতের পবিত্র গঙ্গার নামে এটির নামকরণ করেন। গঙ্গাতালাও আবিষ্কারের পর তিনি হাজার মাইল দূরের ভারতের গঙ্গা থেকে পবিত্র গঙ্গাজল এনে তাতে ঢেলে পরিশুদ্ধ করেন। এরপর থেকে মরিশাসবাসী গঙ্গাতালাওয়ের জলকে গঙ্গাজল হিসেবে ব্যবহার করেন। এই লেকের অন্য পাড়ে আছে সুন্দর একটি শিবমন্দির যা সাগর শিবমন্দির নামে পরিচিত।
সাগর শিবমন্দিরে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উচু শিবের মূর্তি, যা ১৯১৫ সালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। গঙ্গাতালাওয়ের দুর্গা প্রতিমার উচ্চতা ১০৮ ফুট বা ৩৩ মিটার যা কলকাতার দেবপ্রিয় পার্কের সেই দুর্গা প্রতিমাকে ( ৮০ ফুট) ছাড়িয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রতিমার স্থান দখল করে নিয়েছে। এই প্রতিমাটি স্থাপিত হয় সম্পূর্ণ সাধারণ মানুষের দানেই। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। সুদূর ভারত থেকে আনা হয় প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী। নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারতেরই একটি বৃহৎ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে। দেবী দুর্গার পাশেই রয়েছে ভগবান শিবের আর একটি প্রতিমা, যা মঙ্গল মহাদেব নামে পরিচিত। সব মিলিয়ে গঙ্গাতালাওয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ‘ট্যুরিস্ট স্পট’-এ। খুব জাঁকজমকের সঙ্গেই এই দুর্গা প্রতিমার উদ্বোধন করা হয়। উপস্থিত ছিল বিশ্বের বড় বড় সব মিডিয়া। শত শত বছর আগে ভারত থেকে অভিবাসী হওয়া এই হিন্দুরা ভারতকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিশ্বের বুকে স্থান করে দিল এক অনন্য সুন্দর প্রতিমার।
মিডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মন্দিরের কোঅর্ডিনেটর বিচক জানান, এই প্রতিমার জন্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডস-এ স্থান পাওয়ার জন্য তিনি আবেদন করছেন এবং এব্যাপারে তাঁরা খুব আশাবাদী। ভারতবাসীদের কাছে তাঁদের আবেদন, আপনার পরবর্তী পর্যটন গন্তব্য হোক মরিশাস এবং ভুলবেন না মন্দিরের ভূস্বর্গ গঙ্গাতালাওকে !
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই মরিশাসে হয়ে গেল বিশ্ব হিন্দি সম্মেলন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তার উদ্বোধন করেন।