সোমবার কোচবিহারের কর্মীসভায় নাম না করে আসাদউদ্দিন ওয়েসির দল মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল-মুসলিমিন তথা মিম নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই মিম সুপ্রিমো তথা হায়দরাবাদের সাংসদ ওয়েসি পাল্টা আক্রমণ শানালেন মমতার বিরুদ্ধে।
দলের কোর গ্রুপের বর্ধিত বৈঠকে নেতাদের পইপই করে বুঝিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহারের কর্মীসভায় নাম না করেও প্রকাশ্যে মিম নিয়ে মন্তব্য করেন নেত্রী। বললেন, “ওরা বিজেপির কাছে টাকা নেয়। সংখ্যালঘুরা ভুল করবেন না। ওদের বাড়ি হায়দরবাদে। এখানে নয়।”
এদিন টুইট করে ওয়েসি লিখেছেন, “মানবসম্পদ উন্নয়নের মাপকাঠি অনুযায়ী বাংলার মুসলমানদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, এটা বলা কোনও ধর্মীয় উগ্রতা নয়।” এখানেই থামেননি হায়দরাবাদের নিজামের প্রতিষ্ঠা করা দলের নেতা। তাঁর কথায়, “হায়দরাবাদ থেকে আসা লোকজন নিয়ে দিদি যদি এতই উদ্বিগ্ন হন, তাহলে বাংলায় ৪২টির মধ্যে ১৮টি লোকসভা আসন বিজেপি জিতল কী করে?”
বাংলা লাগোয়া বিহারের কিষাণগঞ্জের বিধানসভা উপনির্বাচনে হইহই করে জিতেছে মিম। তখনই দ্য ওয়াল-এ লেখা হয়েছিল ‘তৃণমূলের চিন্তা বাড়িয়ে বিহারে খাতা খুলে ফেলল মিম।’ এর দু’সপ্তাহের মধ্যেই মিমের পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল কোচবিহার শহর। সেই পোস্টারে ছিল ওয়েসির বিরাটাকার ছবি। আর নীচে লেখা ‘ইনতেজার অব খতম, মিশন ওয়েস্ট বেঙ্গল!’
বাংলায় তৃণমূলের অন্যতম মজবুত ভোট ব্যাঙ্কও তো সংখ্যালঘুরাই। পর্যবেক্ষকদের মতে, এখন মিম যদি বলে, এরপর ‘মিশন বাংলা’, দিদির চিন্তা হবে না! হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, দুই চব্বিশ পরগনায় ইতিমধ্যেই তলে তলে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে দক্ষিণ ভারতের এই দল। কিন্তু কোচবিহারে একেবারে ঢাকঢোল বাজিয়ে নিজেদের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করে দিয়েছে ওয়েসি বাহিনী। মমতা এ ব্যাপারে দলের কোর গ্রুপের বৈঠকেও নেতাদের সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, মিম হইতে সাবধান। ওরা কিন্তু বিজেপির বি টিম। সোমবার কোচবিহারে আক্রমণ শানিয়েছিলেন প্রকাশ্যে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল হয়তো সত্যিই বড় বিপদের গন্ধ পাচ্ছে। আর তার বাস্তবতাও রয়েছে। লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলার শাসকদল। অনেকের মতে, বাংলায় যে সিপিএমকে হারানো যায় এটা যেমন তৃণমূল প্রমাণ করে দিয়েছিল, ঠিক তেমনই উনিশের ভোটে বিজেপি বাংলায় প্রমাণ করেছে তৃণমূলকেও হারানো যায়। তৃণমূলের জয়রথ থেমেছে। লোকসভায় ৩৪ থেকে নেমে এসেছে ২২টি আসনে। কিন্তু এর মধ্যেও এমন আসন আছে, যেখানে সুতোর ব্যবধানে জিতেছে শাসকদল। যেমন আরামবাগ আসন। দু’হাজারের কম ভোটে জিতেছেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার। কিন্তু সেই আসনের বুথ স্তরের ফলাফল দেখলে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু এলাকায় যেমন বিজেপির রমরমা, তেমন সংখ্যালঘু এলাকায় তৃণমূলের দাপট। এরকম আসনে যদি মিম উড়ে এসে জুড়ে বসে তা হলে কী হবে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।
বাংলায় যে এ বার মেরুকরণের ভোট হয়েছে তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই। ভোটের ফল ঘোষণার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছিলেন, “টোটালটা হিন্দু-মুসলমান হয়েছে।” একই সঙ্গে বলেছিলেন, “যে গরু দুধ দেয়, আমি তার লাথিও সহ্য করতে পারি!” বিশদ ব্যাখ্যা না করলেও দিদি কী বলতে চেয়েছিলেন তা বাংলার মানুষের বুঝতে অসুবিধে হয়নি। তৃণমূল মনে করে, মিম কট্টর মুসলিম দল হলেও ওদের সঙ্গে বিজেপির একটা অদৃশ্য বোঝাপড়া আছে। যার উদ্দেশ্য, মুসলমান প্রার্থী দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ ভোট কেটে বিজেপির সুবিধে করে দেওয়া। একে কংগ্রেস-সিপিএম কৌশলগত জোট করে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট কাটতে চাইছে। তার উপর মিমও থাবা বসালে তৃণমূলের জন্য তা উদ্বেগের বইকি! সেটাকেই স্পষ্ট করতে চেয়েছিলেন মমতা। কিন্তু মিম প্রধান এদিন বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরাও জমি ছাড়ছেন না।