একশো বছর পরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কথা বলার প্রয়াস। যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা কবিতার হাত ধরে। এক শতাব্দী আগে গুরুদেব জানতে চেয়েছিলেন এক শতাব্দী পর কে তাঁর কবিতা পড়ছেন। তাঁর সৃষ্টির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তাঁর নিজের রচনায় কোনও এক কল্পলোকের কবির উদ্দেশ্য রেখে গিয়েছিলেন এই কবিতা। আর বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী জুটি সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ এর শৈল্পিক নির্মাণে এক সূত্রে বাধা পড়লেন রবীন্দ্রনাথ এবং গুলজার।
শতাব্দী পরে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতার উত্তর দিলেন বিশিষ্ট কবি -গীতিকার গুলজার। প্রকাশ পেল বিশেষ ভিডিও সৌরেন্দ্র- সৌম্যজিৎ এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। উপরি পাওনা রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি। কি ভাবে এই চিন্তা মাথায় আসে জানালেন সৌরেন্দ্র- সৌম্যজিৎ। তাঁরা বললেন, ‘আমরা সবসময় আমাদের কল্পনার ক্যানভাস আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে থাকি। একসাথে গত কুড়ি বছর ধরে আমরা সঙ্গীত, সুর,নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে চলেছি। সঙ্গীতকে মাধ্যম করে সবসময় বৃহত্তর শিল্পকর্ম তৈরি করতে পছন্দ করে এসেছি।
তাঁরা বললেন, ‘লকডাউনের সময়, একটি অজানা মুম্বইয়ের নম্বর থেকে একটি ফোন আসে এবং কলের অপর প্রান্তে একটা ব্যারিটোন ভয়েস ছিল যিনি আমাদের কাজের খোঁজ রাখেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে, কন্ঠস্বর বুঝতে ভুল হয়নি উনি ছিলেন গুলজার সাহেব। কিছু কমন বন্ধুদের কাছ থেকে আমাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছিলেন। ভালো লাগে শুনে, আমরা একসঙ্গে কিছু তৈরি করতে পারি কিনা এমন একটা খোলা আমন্ত্রণ জানিয়ে যখন ফোন রাখেন।এর পর আসে বেশ কিছু সঙ্গীত, কবিতা আদান প্রদানের পালা, একে অপরকে কিছুটা চিনে নেওয়ার প্রয়াস। ঘটনাক্রমে রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা যা তিনি শতবর্ষ পরে কোনো এক কল্পলোকের কবিকে উদ্দেশ্য করে লিখে গেছেন, যে একশো বছর পরে কে তাঁর কবিতা পড়ছেন। নিজের প্রাসঙ্গিকতা বুঝে নেওয়ার এ এক শৈল্পিক কৌশল মাত্র! আর আমরা ঠিক করেছিলাম গুরুদেব তাঁর রেখে যাওয়া এই প্রশ্নের উত্তর যেন খুঁজে পান গুলজার সাহেবের লেখায়। সেই মোতাবেক গুলজার সাহেবেকে অনুরোধের ফসল স্বরূপ জন্ম নেয় একটা নতুন কবিতা। যা তিনি নিজেই পাঠ করেছেন এই ভিডিওটিতে।যেন শতবর্ষ পরে অন্য এক শতাব্দীর কবি গুরুদেবের সাথে আলোচনা করছেন। উত্তর দিচ্ছেন তাঁর রেখে যাওয়া সব প্রশ্নের।
সৌরেন্দ্র- সৌম্যজিৎ জানান যে ‘রবীন্দ্রনাথ নিজেও স্বকন্ঠে কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলেন। এর থেকে বোঝা যায় ওঁর কাছেও কবিতাটার গুরত্ব কতটা ছিল! এই ভিডিওটিতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রবীন্দ্রনাথের কন্ঠের নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিক যেন দুই কবির হঠাৎ দেখা কবিতার পথ ধরে। আমরা খুশি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে এই ভিডিওটি প্রকাশ করেছি আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। আশা করি সকল রবীন্দ্রানুরাগী তথা সাহিত্য প্রেমীদের কাছে এই উদ্যোগ সাধুবাদ পাবে।”
অন্যদিকে গুলজার বললেন, ” সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ দুজনই খুব ক্রিয়েটিভ। ওঁদের ইচ্ছা ছিল যদি গুরুদেবের ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’, এই কবিতাটির একটা উত্তর আমি লিখি। কিন্তু আমার এত ক্ষমতা নেই যে গুরুদেবকে উত্তর দেব। তাও একটা লেখা লিখেছি যে আজও ওঁর কবিতা আমরা পড়ি, আজও তিনি ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক, তাই তো আজও ওঁনার গান, কবিতা আমরা চর্চা করি। হয়তো গুরুদেব এই হোম ওয়ার্কটা করতে দিয়েছিলেন আমায়!” রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকীতে এ এক পরম প্রাপ্তি বলা যায়!