কলাইকুন্ডাও ৩৪! দু’দিনের ঝড়বৃষ্টিতে ঝপ করে নামল পারদ, কলকাতায় কতটা কমেছে দিনের তাপমাত্রা?

৪৩.৮, ৪৪.৭, ৪৫.৩— ধারাবাহিক ভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার তালিকায় শীর্ষে ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডা। তাপমাত্রা সেখানে বেড়েই চলেছিল। প্রতি দিনই তাপপ্রবাহের দাপটে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গে। এমনকি, কলকাতাতেও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে পরিস্থিতি বদলেছে ঝপ করে। দু’দিনের ঝড়বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র তাপমাত্রা কমে গিয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়েও নীচে চলে গিয়েছে পারদ।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৩ ডিগ্রি কম। মাত্র আট দিন আগে মরসুমের সবচেয়ে উষ্ণ দিনের সাক্ষী থেকেছে শহর। তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৪৩ ডিগ্রিতে। তীব্র গরমের সেই হাহাকারে সোমবার স্বস্তি নিয়ে এসেছে বৃষ্টি।

শুধু কলকাতা নয়, দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী সোমবার এবং মঙ্গলবার ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটারও। এই দু’দিন সমুদ্রেও মৎস্যজীবীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল হাওয়া অফিস। ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাবে সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। বুধবার রাত পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

আলিপুরের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র তাপমাত্রা কমেছে চোখে পড়ার মতো। যে কলাইকুন্ডা শুধু বাংলা নয়, সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নজির গড়েছে কিছু দিন আগেই, সেখানে বুধবার ৩৪.২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা ওঠেনি। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৯ ডিগ্রি কম। এ ছাড়া বুধবার মেদিনীপুরে ৩২.৪, কৃষ্ণনগরে ৩২.২, আসানসোলে ৩৩.৬, ঝাড়গ্রামে ৩২.৫, পুরুলিয়ায় ৩৪.৩, ব্যারাকপুরে ৩৩.১, বর্ধমানে ৩৩, ক্যানিংয়ে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারা সপ্তাহ বৃষ্টি চলবে। আপাতত আগামী শনিবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টি বাড়তে পারে শুক্রবার। ওই দিন আবার কালবৈশাখীর পূর্বাভাস জানিয়েছে আলিপুর। কলকাতা-সহ দক্ষিণের সব জেলাতে শুক্রবার বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টি (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার) হতে পারে।

আবহাওয়ার এই পরিস্থিতির জন্য ঘূর্ণাবর্তকে দায়ী করেছেন আবহবিদেরা। বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই মুহূর্তে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ০.৯ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করছে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্ব রাজস্থান থেকে দক্ষিণ অসম পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা বিস্তৃত। যার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প প্রবেশ করছে গাঙ্গেয় বাংলায়। তাতেই ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি, জানিয়েছে হাওয়া অফিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.