অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণের পর থেকেই আতঙ্ক বেড়েছে দেশের অনেক জায়গাতেই, বিশেষ করে যে সব অঞ্চলের নাগরিকের উপযুক্ত নথিপত্র নেই। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিও নাগরিক পঞ্জীকরণ নিয়ে তাই আতঙ্কে। ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এনডিএ-র বিরুদ্ধে এ নিয়ে সরব হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠী। তাই উত্তর-পূর্বের মানুষকে এই বিলের তাৎপর্য বোঝাতে মাঠে নেমেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ (এনআরসি) নিয়ে যা হয়েছে তা আরএসএসের মনঃপূত হয়নি। সংগঠনের বরিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “আমরা জানি যে এই বিলের প্রতিবাদ হবে এবং বিরোধিতা হবে, কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাব, গিয়ে তাঁদের বোঝাব যে ফলে অসমের জনবিন্যাসের উপরে কোনও প্রভাব পড়বে না।”
আরএসএসের ওই নেতা বলেন, “আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রামে গ্রামে পৌঁছাতে শুরু করেছেন, এই বিল কেন দরকারি সেকথা স্থানীয় ভাষায় লিখে লিফলেট বিলি করছেন। তাঁরা বোঝাচ্ছেন কেন এই বিলের ফলে ভূমিপুত্রদের কোনও সমস্যা হবে না।”
এই বিলের যে কোনও প্রভাবই অসম বা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও রাজ্যের উপর পড়বে না, সে কথাও উত্তরপূর্ব ভারত জুড়ে প্রচার করছে আরএসএস। তিনি বলেন, “এই বিল প্রযোজ্য হবে পুরো দেশের ক্ষেত্রেই; দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট রাজস্থান প্রভৃতি রাজ্যে যাঁরা দেশহীন অবস্থায় রয়েছেন, তাঁরা স্বস্তি পাবেন।”
অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আগেই নলবাড়িতে জানিয়েছিলেন, সংশোধিত বিলটি সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ হবে। তিনি বলেন, “আগে যে বিলটি পেশ করা হয়েছিল এটি তার থেকে আলাদা, এই বিলের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনন্য সংস্কৃতি ও পরিচয় সুরক্ষিত থাকবে। গত তিরিশ বছর ধরে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিজেপি বদ্ধপরিকর।”
লোকসভা নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিল ছিল অন্যতম ইস্যু, অসমের পঞ্চায়েত ভোটেও তাই। সেই ইস্যুতেই লোকে তাদের ভোট দিয়েছে বলে মনে করে বিজেপি। তা সত্বেও অবশ্য এই বিল নিয়ে বিরোধিতা তৈরি হয়েছে এবং ছাত্রদের থেকে এই বিরোধিতা আসছে। নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন সোমবার পথে নেমে প্রতিবাদ করবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (আসু) মুখ্য পরামর্শদাতা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এই বিল মানব না – এটা অসাংবিধানিক, বেআইনি, এবং দেশবিরোধী। কোনও অবস্থাতেই আমরা এই বিল মানব না।”
আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যে সব সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসিক এবং খ্রিস্টানরা ভারতে নাগরিকত্বের আবেদন করবেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই বিল। এবছর ৮ জানুয়ারি বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল। তারপরে বিভিন্ন মহল থেকে তো বটেই, এনডিএ শরিকদের মধ্যেও এর বিরোধিতা দেখা যায়। তাই বিলটি রাজ্যসভায় পেশই করা হয়নি।
বিজেপি প্রায়ই বলে থাকে যে ১৯৭১ সালে বিপুল সংখ্যায় বাঙালি হিন্দু, কোচ রাজবংশী ও বৌদ্ধরা যখন ভারতে এসেছিলেন, তখন তাঁদের শরণার্থী শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। লোকসভা ভোটের আগে আরএসএস কর্মীরা পুরো অসম জুড়ে জনসংযোগ করেছিল তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে। তারা বুঝিয়েছিল, যাঁরা এদেশের বাসিন্দা এই বিল তাঁদের বিরুদ্ধে যাবে না।