কেন্দ্রীয় আয়কর দফতর সম্প্রতি গান্ধী পরিবারের কর ফাঁকি দেওয়ার কারচুপি নাকচ করল। গোটা বিষয়টা ঘাগু কর প্রতারকদের কাজকর্মের সঙ্গে খাপ খায় বলেই বেশ গোলমেলে। তবু টাকা যেহেতু দেশের মানুষের তাই বোঝার ও প্রতিবাদের দায় থেকেই যায়। অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল বলে কংগ্রেস দলের একটি প্রকাশনা সংস্থা এক সময় দলের কাগজ ন্যাশনাল হেরাল্ড ছাপতো। এখন আর ওসব কিছু করে না। এক সময় এরা পিতৃপ্রতিম সংস্থা কংগ্রেসের কাছ থেকে নব্বই কোটি টাকা ধার করেছিল।
প্রকাশনা বন্ধ হলেও দিল্লির মহার্ঘ অঞ্ছলে এদের বিশাল বহুতল বিশিষ্ট বাড়িটি ছিল। সাম্প্রতিক মূল্যায়ন অনুযায়ী তার দাম চারশো কোটি টাকার আশপাশে। নজর রাখছিলেন সুযোগসন্ধানী গান্ধী পরিবার। কি অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল কি কংগ্রেস দল সবইতো পরিবারের কবলে। আয়কর দপ্তরের তদন্তে উঠে এসেছে অভিনব পন্থায় তাঁরা যুব কংগ্রেসের মুখপত্র ইয়ং ইন্ডিয়াকে এবার মাঠে নামালেন। এটির চেয়ারম্যান আবার রাহুল গান্ধী। এই ইয়ং ইন্ডিয়া কাগজে কলমে এজেএলের দেনা মেটাতে কংগ্রেসের মাধ্যমে পঞ্চাশ লাখ টাকা তাদের দিল। একই অঙ্গে কত রূপ দেখুন। কংগ্রেস দলের মালিক যে পরিবার সে কথাও সকলে জানেন।
পঞ্চাশ লাখ দেওয়ার পরই আদেশ হল সমস্ত ঋণ মকুব করে দাও। তাই হলো। বলার কিছু নেই। ঘরেলু মামলা। পঞ্চাশ লাখে নব্বই কোটি মকুব হলো। এইবার শুরু হলো আসলি খেল। এ সবই ২০১০-১১ সালের কথা। দলের তখন রমরমা।
দেনা শোধ করার প্রতিদান হিসেবে এজেএলের সমস্ত শেয়ার ট্রান্সফার হয়ে গেল ইয়ং ইন্ডিয়া সংস্থায়। বুঝতে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে,তবু বুঝতে হবে। ইয়ং ইন্ডিয়ার ওনার ও ডিরেক্টর আবার পুরো গান্ধী পরিবার। কিন্তু তারা আগ বাড়িয়ে এজেএলে ঢুকলো কেন? কেননা জলের দরে এজেএলের শেয়ারের সঙ্গে তার চারশো কোটি টাকার সম্পত্তিরও মালিক হয়ে বসলো ইয়ং ইন্ডিয়ার বকলমে গান্ধী পরিবার। ঐ সম্পত্তিতে মোটা টাকার ভাড়া পেতে লাগলো গান্ধীরা।
সংস্থার ঘোষণাপত্রে লেখা ছিল এটি একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান।এই ফাঁক দিয়ে পুরোদমে চলতে লাগল কর প্রতারণা। খেয়াল রেখে ছিলেন সুব্রমানিয়াম স্বামী। গোচরে আনলেন আয়কর দপ্তরের। এজেএল অধিগ্রহণের উদ্দেশ্য ধরা পড়ে গেল। আসলে ওঁরা দাতব্যের অছিলায় যে সোনার রাজহাঁস কিনতে গিছেলেন তা প্রকাশ্যে এলো যখন আয়কর দপ্তর ২০১১-১২ অর্থবর্ষ থেকে ভুল তথ্য দিয়ে একশো পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা দেশের কর ফাঁকি দেওয়ার নোটিশ ধরালো।
পরিবার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর প্রযোজ্য নয় এরকম যুক্তি দিলো। ইতিমধ্যে সরকার বদল হওয়ায় কাজে গতি এসেছে। পরিবার ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালে রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিল। তারা তন্নতন্ন করে পাত্তা লাগিয়েও ইয়ং ইন্ডিয়ার হিসাবে একটিও দাতব্য সংক্রান্ত লেনদেন পাইনি। পেয়েছে কেবল কলকাতার একটি সংস্থা থেকে ইয়ং ইন্ডিয়াকে এক কোটি টাকা দেওয়ার একটি লেনদেন যা থেকেই এজেএলকে পঞ্চাশ লাখ টাকা দিয়ে চারশো কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া হয়।
বছরের পর বছর আদায় হতে থাকে সম্পত্তির ভাড়া। জনস্বার্থে খরচার খাতা শূন্য। আয়কর বিভাগ এই ধারাবাহিক প্রতারণার মূলে ঢুকে কমিশনার অব আইটি একজেম্পশন অর্থাৎ ছাড় দেয়ার অধিকর্তা ২০১১-১২ থেকে ইয়ং ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিয়েছে।পরিণতিতে অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালে দাখিল করা মামলাও খারিজ হয়ে গেছে। এবার আদালতে গিয়ে ফয়সালা করতে হবে ততখন চৌকিদার নয় তুমি কি হায় বাবা। এত জমকালো একটা খবর যে কাগজ না পড়লে পিছিয়ে পড়তে হয় সেখানে একবার বুড়িছোঁয়াও হলো না। ওঃ নৈঃশব্দের কি নির্লজ্জ নিরপেক্ষতা।