কথায় আছে, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। সেটাই যদি একটু উলটে দিয়ে বলা হয়, ‘যে অঙ্ক ভালবাসে, সে নাচেও পারদর্শী’— তা হলে কেমন লাগে? এমনটাই সত্যি সোমদত্তার ক্ষেত্রে। সোমদত্তা সামন্ত। এ বারের মাধ্যমিকে জেলার তাকলাগানো ফলাফলের মধ্যে কলকাতা থেকে একমাত্র সোমদত্তাই প্রথম দশের মেধতালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কলকাতা থেকে প্রথম এবং রাজ্যে দশম স্থান দখল করে নিয়েছে সে। গড়িয়ার মেয়ে সোমদত্তার এই সাফল্যে কার্যত খুশির জোয়ারে ভাসছে পরিবার-পরিজন থেকে এলাকাবাসী।
দক্ষিণ কলকাতার সাদার্ন এভিনিউয়ের কমলা গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী সোমদত্তা। মাধ্যমিকে মোট ৭০০-র মধ্যে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। বরাবরই ভাল ছাত্রী ছিল স্কুলে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে বরাবর ফার্স্ট হয়ে আসা এই মেয়ে কোনও ছকে বাঁধা রুটিনে পড়তে ভালবাসত না। যখন ইচ্ছে হত পড়ত। একেবারেই না-পসন্দ মোবাইল। বরং পড়ার ফাঁকে কখনও গল্পের বই আবার কখনও ভীষণ প্রিয় নাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকত সোমদত্তা। তবে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শেষ কয়েক মাস বন্ধ ছিল সবই।
বাবা স্কুলশিক্ষক। মা গৃহবধূ। মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান হলেও কখনই সোমদত্তার উপর কোনও কিছু নিয়ে জোর খাটাননি তাঁরা। আনন্দবাজার অনলাইনকে সোমদত্তার বাবা জানিয়েছেন, মেয়ে নিজেই পড়তে ভালবাসত। তাই কখনও তাঁকে জোর করে পড়তে বসাতে হয়নি। চাকরির জন্য তিনি বাড়িতে না থাকায় মেয়ের পড়াশোনায় নজর রাখতেন সোমদত্তার মা-ই। মেয়ে ভাল ছাত্রী হওয়ায় ভেবেছিলেন পরীক্ষার ফল ভাল হবে। কিন্তু কলকাতা থেকে ও একাই মেধাতালিকায় দশম স্থান অধিকার করে নেবে, এ তাঁদের ভাবনাতীত। স্বভাবতই আবেগে ভাসছেন তাঁরা।
তার রেজ়াল্ট নিয়ে কী জানিয়েছে সোমদত্তা? তার দাবি, সে-ও এতটা ভাল ফল আশা করেনি। পুরো কৃতিত্বই তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং তার স্কুলের। অতিমারির সময়েও তার স্কুলের শিক্ষিকারা এমন ভাবে তাকে সাহায্য করেছে, যা ভোলার নয়। যে হেতু অঙ্ক তার প্রিয় বিষয়, তাই এর পরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। তার পর হয় ছোটবেলার ইচ্ছে পূরণ করতে চিকিৎসক হওয়ার প্রস্তুতি নেবে অথবা বিজ্ঞানের যে কোনও বিষয় নিয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য সচেষ্ট হবে।