চেনা ইডেন গার্ডেন্স থেকে খালি হাতে ফিরতে হল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তাঁর দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারিয়ে জয়ে ফিরল শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স। সোমবার ঋষভ পন্থদের ৭ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখলেন শ্রেয়স আয়ারেরা। ইডেনের ৫৭ হাজার দর্শকের সামনে দিল্লির ৯ উইকেটে ১৫৩ রানের জবাবে ১৬.৩ ওভারের কেকেআর তুলল ৩ উইকেটে ১৫৭।
বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করে টস জিতে ইডেনের ২২ গজে ব্যাট করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দিল্লির অধিনায়ক পন্থ। তাঁর সেই সিদ্ধান্ত মর্যাদা পেল না দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায়। দিল্লির ইনিংস শেষ হয় ৯ উইকেটে ১৫৩ রানে। নয় নম্বরে নেমে কুলদীপ সিংহ ৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস না খেললে দিল্লির অবস্থা আরও করুণ হত। কেকেআরে বৈভব অরোরা, হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তীদের দাপটে ধারাবাহিক ভাবে উইকেট হারায় দিল্লি। পৃথ্বী শ দলে ফিরলেও রানে ফিরতে পারলেন না। তিনি আউট হলেন ১৩ রানে। অন্য ওপেনার বিপজ্জনক জ্যাক ফ্রেজার ম্যাকগার্কও (১২) ব্যর্থ হলেন ইডেনে। ভাল শুরু করেও চেনা ইডেনে বড় রান করতে পারলেন না অভিষেক পোড়েল। ২টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে করলেন ১৫ বলে ১৮। আবার ব্যর্থ সাই হোপ (৬)। ৬৮ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই লড়াই থেকে কার্যত হারিয়ে যায় সৌরভের দিল্লি।
চাপের মুখে দলকে ভরসা দিতে পারলেন না অধিনায়ক পন্থও। তিনি করলেন ২০ বলে ২৭। মারলেন ২টি চার এবং ১টি ছক্কা। অক্ষর পটেল (১৫), ট্রিস্টান স্টাবস (৪), কুমার কুশাগ্ররা (১) আরও চাপ বৃদ্ধি করলেন। কুলদীপকে কিছুটা সঙ্গ দিলেন রাসিখ সালাম দার। ১০ বলে ৮ রান করলেন জম্মু-কাশ্মীরের ক্রিকেটার। শেষে লিজ়াড উইলিয়ামস অপরাজিত থাকলেন ১ রান করে। ২২ গজের অন্য প্রান্তে অপরাজিত থাকা লড়াকু কুলদীপের ব্যাট থেকে এল ৫টি চার এবং ১টি ছক্কা।
কেকেআরের সফলতম বোলার বরুণ ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। ২৭ রানে ২ উইকেট হর্ষিতের। ২৯ রানে ২ উইকেট বৈভবের। ২৪ রানে ১ উইকেট সুনীল নারাইনের। এ দিনও ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করলেন মিচেল স্টার্ক। ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনেও ২৫ কোটি টাকার বোলার ৩ ওভারে ৪৩ রান বিলিয়ে পেলেন ১ উইকেট। অসি বোলারকে দিয়ে ৪ ওভার বল করাতে পারলেন না শ্রেয়স। শেষ ওভারে বাধ্য হয়ে আক্রমণে আনতে হয় আন্দ্রে রাসেলকে। কেকেআরের দাপটে ইডেনের দর্শকেরাও ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। দুই ইনিংসের মাঝে আলো-ধ্বনির অনুষ্ঠান তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন তাঁরা।
জয়ের জন্য ১৫৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাবলীল ভাবে শুরু করলেন কেকেআরের দুই ওপেনার নারাইন এবং ফিল সল্ট। এ দিন ইডেনে বেশি আগ্রাসী ছিলেন ইংরেজ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। দিল্লির কোনও বোলারকেই রেয়াত করলেন না সল্ট। ২৬ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করলেন তিনি। মাঠের চার দিকে শট মারলেন তিনি। খলিল আহমেদকে মারার তাঁর অর্ধশতরান পূর্ণ করার ছক্কায় বলই হারিয়ে গেল! নারাইন এ দিন মূলত সঙ্গ দিলেন সল্টকে। অক্ষরের বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করলেন ১০ বলে ১৫। মারলেন ৩টি চার। নারাইন আউট হওয়ার পর সাজঘরে ফিরলেন সল্টও। কেকেআরের দুই ওপেনারকেই আউট করলেন অক্ষর। ইংরেজ ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে এল ৩৩ বলে ৬৮ রান। মারলেন ৭টি চার এবং ৫টি ছয়।
দিল্লির বিরুদ্ধে ব্যাটিং অর্ডারের চমক দিল কেকেআর। তিন নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হল রিঙ্কু সিংহকে। তবে তিনি এ দিন রান পেলেন না। ১১ বলে ১১ রান করলেন তিনি। পর পর ৩ উইকেট হারানোর পর কেকেআরের রান তোলার গতি বেশ কমে যায়। তাতে অবশ্য বড় কোনও সমস্যা হয়নি লক্ষ্য কম থাকায়। অধিনায়ক শ্রেয়স এবং বেঙ্কটেশ আয়ার তেমন ঝুঁকি না নিয়েই কেকেআরকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন ব্যাট হাতে। শ্রেয়স অপরাজিত থাকলেন ২৩ বলে ৩৩ রান করে। বেঙ্কটেশ অপরাজিত থাকলেন ২৩ বলে ২৬ রান করে। বেঙ্কটেশ মারলেন ৩টি চার এবং ১টি ছয়। বেঙ্কটেশের ব্যাট থেকে এল ২টি চার এবং ১টি ছয়।
অক্ষর ছাড়া দিল্লির কোনও বোলারই এ দিন নজর কাড়তে পারলেন না। অক্ষর ২৫ রানে ২ উইকেট নিলেন। ৩৮ রানে ১ উইকেট উইলিয়ামসের। কুলদীপ ৩৪ রান দিলেও উইকেট পেলেন না। কেকেআর ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারলেন না দিল্লির অন্য বোলারেরাও।