ষষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দিনে জেলা শাসক অফিসে এসইউসিআই(কমিউনিস্ট) দলের তমলুক কেন্দ্রের প্রার্থী নারায় চন্দ্র নায়ক ও কাঁথিতে মানস প্রধানের মনোনয়নপত্র পেশ।
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্র সহ সারা দেশের ১৯টি প্রদেশ ও ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ১৫১টি লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে। যার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তমলুক কেন্দ্রে নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও কাঁথি কেন্দ্রে মানস প্রধান প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হয়েছেন।
দলের পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক প্রণব মাইতি বলেন, নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ছাত্রাবস্থায় দলের প্রতিষ্ঠাতা শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে দলের সাথে যুক্ত হন। বর্তমানে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী ও পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য। যিনি পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হন। কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাঁকাডাঙ্গা গ্রামে বাড়ি হওয়ায় রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ওই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জল নিকাশী সমস্যা সমাধানের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে মানুষজনকে নিয়ে ‘কৃষক সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে কোলাঘাট ব্লকে ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যার্তদের উদ্ধার, ত্রাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজনৈতিক জীবনের পরবর্তী সময়ে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাণঘাতী পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ, ব্লক এলাকার বিভিন্ন রাস্তা পিচ বা কংক্রিটের করা, এলাকায় চোলাই মদের ভাটি বন্ধ করা- সহ একাধিক দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। আরো পরে ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ফুলবাজার সহ নানা সমস্যা সমাধানের দাবিতে রাজ্যগতভাবে আন্দোলন গড়ে তোলেন। অন্যদিকে জেলার হোসিয়ারী শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস বৃদ্ধি, জেলার রূপনারায়ণ নদী ও সোয়াদিঘি খাল সহ বিভিন্ন নিকাশী খাল সংস্কার, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের মাধ্যমে দুই মেদিনীপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বাস চলাচলের নানান অব্যবস্থা দূরীকরণ প্রভৃতি দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেন।
অন্যদিকে দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক অশোক তরু প্রধান বলেন, মানস প্রধান প্রাক্তন ছাত্রনেতা, কাঁথি শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মানসবাবু শহরবাসীর জীবনের নানান সমস্যা সহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ আন্দোলনে, যশ ঝড় সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে, শ্রমিক ও কৃষকদের নানাবিধ ন্যায্য দাবি- সহ বহু সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ও কর্মকাণ্ডে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী, গণআন্দোলনের একজন বিশিষ্ট সংগঠক। জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপন কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা বন্ধ করা, কেলেঘাই-বাগুই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন, বারচৌকা বেসিন ও খালগুলি সংস্কার, দীঘা-পাঁশকুড়া-হাওড়া লাইনে পর্যাপ্ত লোকাল ট্রেনের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করছেন মানসবাবু।
প্রণব মাইতি ও অশোক তরু প্রধান বলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বিদ্যুতের বেসরকারীকরণ, দুর্নীতি, বেকার সমস্যা, নারী নির্যাতন, সিএএ বিরোধী সহ বিভিন্ন আন্দোলনে ওই দুই নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। উপরোক্ত আন্দোলনের পাশাপাশি পার্টি ও বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্বে তাম্রলিপ্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ব্লকের গ্রামীন হাসপাতালের উন্নয়ন, তমলুক-হলদিয়া-পাঁশকুড়ায় রেললাইনের উপর ফ্লাই ওভার নির্মাণ, দিঘা ও হলদিয়া লাইনে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে দেউলিয়ায় আন্ডারপাস নির্মাণ, মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণ সহ শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন প্রভৃতি দাবিতে জেলাজুড়ে যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনের পরীক্ষিত সৈনিক হলেন নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও মানস প্রধান। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচকমন্ডলীকে ওই দুই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান।
নিমতৌড়িতে দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হয়ে এক সুসজ্জিত মিছিল করে জেলা শাসক অফিসে মনোনয়নপত্র পেশ করেন। প্রার্থীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক প্রণব মাইতি ও দক্ষিণ জেলা কমিটির সম্পাদক অশোক তরু প্রধান, জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য প্রদীপ দাস, চিন্ময় ঘোড়ই,শীলা দাস, জ্ঞানানন্দ রায় প্রমুখ।
নারায়ণবাবু ও মানসবাবু সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নির্বাচকমন্ডলী তাদের নির্বাচিত করলে লোকসভার অভ্যন্তরে উপরোক্ত আন্দোলনের কন্ঠস্বরকে পৌঁছে দিয়ে দাবি আদায় করতে সচেষ্ট হবেন।