হাই কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৫৩ জনের। অথচ এসএসসি-র দাবি, অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছিল ৫২৫০ জনকে। তা হলে কি বাকিরা সকলে যোগ্য? আদালতে দাঁড়িয়ে সে কথা প্রমাণ-সহ বলতে পারলে কি আদৌ পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার প্রয়োজন হত?
কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। বরং এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার মানছেন, ‘‘(বাকিরা যে প্রত্যেকে যোগ্য) সেই বিষয়ে নিশ্চিত নই। পুরোপুরি শংসাপত্র দিতে পারব না।’’
আগে উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) সংরক্ষণের নিয়ম ছিল তিন বছর। হঠাৎ ২০১৬ সালেই তা কমিয়ে এক বছর করা হয়েছিল কেন?
কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। আবারও। নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে বিস্তর জলঘোলা, সাড়ে পঁচিশ হাজার জনের চাকরি খোয়ানো এবং রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ অনেকে জেলে যাওয়ার পরে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ‘আশ্বাস’, এ বার থেকে ওএমআর শিট সংরক্ষণ করা হবে বা রেখে দেওয়া হবে দশ বছর। চাকরিহারা এবং চাকরিপ্রার্থীদের আক্ষেপ, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের জন্য এসএসসি-র নেওয়া পরীক্ষার উত্তরপত্র সংরক্ষিত থাকলে হয়তো ২০১৬-তে নিযুক্ত সকলের চাকরি বাতিল করতে হত না হাই কোর্টকে। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে কারা যোগ্যতার নিরিখে চাকরি পেয়েছিলেন, তা বোঝা যেত।
লোকসভা ভোট মিটলেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই বিষয়টি খোলসা করে সিদ্ধার্থের দাবি, ২০১৬ সালের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। তবে কি যোগ্যতার নিরিখে যাঁরা শিক্ষকতা করছিলেন, তাঁদেরও আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে? চেয়ারম্যানের কথায়, “হাই কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে, তাতে নতুন করে আবেদন করার কথাই বলা হয়েছে।” তবে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। ফলে সুপ্রিম কোর্ট কী বলবে, তার উপরেই পুরোটা নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
২০১৬ সালের পরে এসএসসি-তে নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা আর হয়নি। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াই সম্প্রতি বাতিল করেছে হাই কোর্ট। ২০১৬-র উত্তরপত্র এক বছর সংরক্ষণ করার পরে তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন ফের জানিয়েছেন সিদ্ধার্থ। কেন? তার সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে মেনেছেন যে, উত্তরপত্র সংরক্ষিত থাকলে হয়তো আইনি জটিলতা তৈরি হত না। তিনি জানান, ২০১৬ সালেই বদল করা হয়েছিল উত্তরপত্র সংরক্ষণ নীতি। সে বারই ওএমআর শিটের উপরে উত্তর লেখাও শুরু হয়। তার আগে এসএসসি-র উত্তরপত্র তিন বছর সংরক্ষণের নিয়ম ছিল। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, দুর্নীতি করার উদ্দেশ্যেই ২০১৬-তে উত্তরপত্র সংরক্ষণের সময় কমিয়ে এক বছর করা হয়েছিল।
এ দিনই সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বলেন, “শুধু দশ বছর সংরক্ষণ নয়, পরীক্ষার্থীরা এ বার থেকে ওএমআর শিটের প্রতিলিপি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন।” উল্লেখ্য, প্রাথমিকে যে নিয়োগ হয়, সেখানে সম্প্রতি উত্তরপত্রের প্রতিলিপি সঙ্গে করে বাড়ি নেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে।
হাই কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি-পাওয়াদের ‘বাঁচাতে’ কারা সুপার নিউমেরিক বা অতিরিক্ত পদ তৈরি করেছিল, তা খতিয়ে দেখুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রয়োজনে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। কিন্তু এ দিন ব্রাত্যের দাবি, অতিরিক্ত পদে একটি নিয়োগও হয়নি। শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের বক্তব্য না শুনে তাদের কার্যত অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে রায় ঘোষণা করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। মন্ত্রীর প্রশ্ন, “আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি কেন? আমরা বারবার বলেছি, আদালত দিশা দেখাক। সরকার সেই পথেই এগোবে। যোগ্যদের নিয়োগে এসএসসি-র ইতিবাচক ভূমিকা সত্ত্বেও আদালত তাকে মান্যতা দেয়নি।”
অযোগ্যদের চিহ্নিত করা প্রসঙ্গে সিদ্ধার্থের দাবি, ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ২০ ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি তিন বার হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে অযোগ্যদের তালিকা দিয়েছিলেন তাঁরা। সিদ্ধার্থ বলেন, “নবম-দশমে ৮১১ জন, একাদশ-দ্বাদশে ৯৯৩ জন, গ্রুপ-সি ১১৩৩ এবং গ্রুপ-ডি ২৩১৩ জন— মোট ৫২৫০ জনকে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। এঁরা সবাই ওএমআরে কারচুপি, র্যাঙ্ক জাম্প, প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগে অভিযুক্ত।”
তবে কি এর বাইরে বাকি সকলেই যোগ্য? জোর দিয়ে সেই কথাটুকুই আর বলতে পারছে না এসএসসি।