‘কাকু’র সঙ্গে কার কথা? যা সন্দেহ করেছিলাম তা-ই, কণ্ঠস্বর-রিপোর্ট জমা দিয়ে হাই কোর্টকে জানাল ইডি

দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রাথমিকে নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা হাতে পেয়েছে ইডি। সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানাল, তারা যা সন্দেহ করেছিল, তা মিলে গিয়েছে। তবে কোন কথোপকথনের সঙ্গে কণ্ঠস্বরের নমুনা মিলিয়ে দেখা হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

যদিও ওই কণ্ঠস্বর নিয়ে রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। ইডির রিপোর্ট সংক্ষিপ্ত বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

প্রাথমিকে নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলার তদন্ত করছে ইডি। সেই মামলায় তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট বুধবার আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল। ওই তদন্তের সূত্রেই ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। সম্প্রতি ইডি সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েছে। বুধবার আদালতে তা জমা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট দিয়ে ইডি জানায়, তাঁরা ‘কাকু’র কণ্ঠস্বর নিয়ে যে সন্দেহ করছিল, তা মিলে গিয়েছে। সেই সন্দেহের সপক্ষেই রিপোর্ট এসেছে।

বুধবার আদালতে ইডি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তা পাঁচ পাতার। তার মধ্যে তিন পাতা জুড়েই ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের তথ্য রয়েছে। বাকি দু’পাতায় ছিল এই মামলায় ইডির সার্বিক তদন্তের রিপোর্ট। এতেই বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ইডির তদন্তের রিপোর্ট এত সংক্ষিপ্ত কেন? প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সিংহ।

আদালতে ইডি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে শেষ দু’পাতায় সুজয়কৃষ্ণের সূত্রে এবং প্রাথমিক মামলায় সার্বিক ভাবে এখনও পর্যন্ত ইডি কী কী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, তার হিসাব দেওয়া হয়েছে। মোট ১৩৪ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। বিচারপতি সিংহের প্রশ্ন, ‘‘২০১৪ সাল থেকে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তাতে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির পরিমাণ এত কম কেন? টাকার অঙ্কই বা এত কম কেন?’’

ইডি আদালতে জানিয়েছে, আরও কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছ থেকে তার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। প্রতি দিনই তদন্ত এগোচ্ছে। কিন্তু ইডির এই বক্তব্যেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিচারপতি।

ইডির হয়ে আদালতে এই মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী। এ ছাড়া, মূল মামলাকারীদের আইনজীবী হিসাবে ছিলেন ফিরদৌস শামিম এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। আগামী ১২ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

উল্লেখ্য, বুধবার ইডির পাশাপাশি সিবিআইও এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দিয়েছে। সিবিআই আবার পৃথক ভাবে জেলে গিয়ে সুজয়কৃষ্ণকে জেরা করার আবেদন জানিয়েছে কলকাতার বিচার ভবনে। নিয়োগ মামলাতেই জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়েছে তারা।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। তার পর দীর্ঘ দিন তিনি হাসপাতালে ছিলেন। মাঝে একটি বেসরকারি হাসপাতালে হৃদ্‌যন্ত্রের অস্ত্রোপচারও হয় সুজয়কৃষ্ণের। তাঁকে হেফাজতে নিতে বার বার চেষ্টা চালায় ইডি। যদিও তা সফল হয়নি। এ বিষয়ে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের দিকেও আঙুল তোলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়েও দীর্ঘ টানাপড়েন হয়। তার পর গত ৩ জানুয়ারি জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর পর ফের এসএসকেএমে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.