প্রশ্ন: ‘ময়দান’ছবিতেকিংবদন্তি ফুটবলার পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রের জন্য যখন ডাক পেয়েছিলেন,প্রথম অনুভূতি ঠিক কেমন ছিল?
চৈতন্য: ফুটবল আমার প্রথম ভালবাসা। দীর্ঘ কুড়ি বছর আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একনিষ্ঠ সমর্থক। ‘ময়দান’ ছবিটি করার আগে স্বর্ণযুগের ভারতীয় ফুটবল নিয়ে আমার এতটা জ্ঞান ছিল না। তাই যখন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রটা যখন পাই, আমি জানতাম, এটা আমি কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারব না। ৭০০০ অভিনেতা এই চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন,আমি তাঁদের অতিক্রম করে যে এখানে এসে পৌঁছেছি, সেটা আমার কাছে খুব বড় পাওনা।
প্রশ্ন:একজন অভিনেতা হিসেবে‘ময়দান’-এর সাফল্য আপনাকে কতটা অনুপ্রাণিত করেছে?
চৈতন্য:২০১৮ সালে আমি প্রথম ‘ময়দান’-এর কথা শুনি। প্রথম দিন থেকেই একটাই কথা মনে হয়েছিল, আমার স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। দীৰ্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষার পর ‘ময়দান’ বড় পর্দায় দেখে আমি খুব খুশি। আমার এক বন্ধু আমাকে জানিয়েছেন, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা আমাকে ‘ময়দান’ ছবিতে দেখে খুব খুশি হয়েছেন। জানিয়েছেন, বাবাকে কোনও দিন মাঠে খেলতে দেখেননি, কিন্তু ‘ময়দান’ দেখে তাঁর সেই সাধ পূরণ হয়েছে। এর থেকে বড় শংসাপত্র আমাকে কে দেবে? কলকাতায় গিয়ে ওঁকে ব্যক্তিগত ভাবে ধন্যবাদ দেব।
প্রশ্ন:পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তটা ঠিক কী রকম ছিল?
চৈতন্য:ভীষণ আবেগপূর্ণ। শুটিং চলাকালীন তিনি সেটে এক বারই এসেছিলেন। আমি ভয়ে, আনন্দে কাঁপছিলাম।
প্রশ্ন:পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রে সব থেকে কঠিন দিক কী ছিল?
চৈতন্য:যথাযোগ্য ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে এক জন খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলাটা সব থেকে কঠিন প্রক্রিয়া ছিল। লাগাতার তিন বছর প্রত্যেক দিন মাঠে ফুটবল খেলেছি, সময় লেগেছে সব কিছু রপ্ত করতে। আমরা যারা ছবিটায় অভিনয় করেছি, কেউই তো পেশাদার ফুটবলার নই! ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য রোজ ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে উঠতাম। ওঠার পর কিছু ক্ষণ সময় লাগত নিজেকে সামলাতে। শুটিং চলাকালীন আমার কোভিড হয়েছিল। নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর পাঁচ দিনের মাথায় আমি আবার শুটিং শুরু করে দিয়েছিলাম। দাঁতে-দাঁত চেপে শুটিং করতাম, মাঠে টিকে থাকার ক্ষমতা কম ছিল, কিন্তু বাকি সবাইকে দেখে উজ্জীবিত হতাম। একজনের অবদান ‘ময়দান’ ছবিতে বিশাল, তিনি দীনেশ নায়ার। ছবিতে ফুটবল ম্যাচের সব কোরিয়োগ্রাফি তিনিই করেছেন।
প্রশ্ন: ‘ময়দান’ছবির পরে কলকাতা আর বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও গাঢ় হল কি?
চৈতন্য:আগে আমি শহরটাকে ‘ক্যালকাটা’ বলে সম্বোধন করতাম, এখন কিন্তু ‘কলকাতা’ বলি। কলকাতা আমার কাছে এখন একটা আবেগ।
প্রশ্ন:স্ত্রী শ্বেতা ত্রিপাঠী খুব বড় মাপের অভিনেত্রী,কী ভাবে একে অপরকে অনুপ্রেরণা দেন?
চৈতন্য:শ্বেতা যত না বড় মাপের অভিনেত্রী, তার থেকেও খুব বড় মাপের মানুষ। মুখে সব সময় একটা হাসি লেগেই থাকে, খুব পজ়িটিভ। যখন আমি ভাবি, বাড়িতে সব সময় শ্বেতার মতো একজন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার ওঠা-বসা, মনে হয় আমি জ্যাকপট পেয়ে গিয়েছি। আর হ্যাঁ, শ্বেতা আমার সব থেকে বড় সমালোচকও বটে।
প্রশ্ন:অভিনয়ের সঙ্গে নিজের সঙ্গীতচর্চা কী ভাবে বজায় রাখবেন?
চৈতন্য:দুটো মাধ্যমকেই আমি ভীষণ ভালবাসি। এখন যখন সবাই আমার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন, তখন আমার গায়কসত্তা ভাবছে, কখন আমি নতুন গান বানাব। আমি নিজেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আগামী ২৫ এপ্রিল আমার একটা নতুন গানের অ্যালবাম মুক্তি পাচ্ছে।