বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনার দুই অভিযুক্ত সকলের চোখে ধুলো দিয়ে অবাধে ঘাঁটি গেড়েছিলেন দিঘার হোটেলে! তা থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার সৈকত শহরের হোটেলে আসা পর্যটকদের উপর নজরদারি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। দিঘার হোটেলগুলিকে সতর্ক করে পুলিশের স্পষ্ট বার্তা, পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই না করে কোনও পর্যটককেই আর হোটেলে থাকতে দেওয়া যাবে না। কোনও ব্যক্তি ভুয়ো আধার বা পরিচয়পত্র নিয়ে এসেছেন কি না, তা নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে আধার কার্ডের বারকোড স্ক্যানের ওপর। কোনও পরিচয়পত্র সন্দেহজনক মনে হলেই তা দ্রুত দিঘা থানায় জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে হোটেলে আসা পর্যটকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘অতিথি’ অ্যাপ চালু করেছে জেলা পুলিশ। এ বার হোটেলগুলিকে আরও বেশি সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার দিঘা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অভিজিৎ পাত্রের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দিঘার হোটেলগুলিতে অভিযান চালায়। কী ভাবে পর্যটকদের তথ্য নথিভুক্ত হচ্ছে, কী ভাবে সেই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, পর্যটকদের দেওয়া পরিচয়পত্রের তথ্য হোটেলের রেজিস্টার খাতায় তোলা হলেও সেই পরিচয়পত্র সঠিক কি না, তা যাচাই করেন না অনেকেই। এর পরেই পুলিশের তরফে হোটেলগুলিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, তথ্য যাচাইয়ের জন্য আধারের বারকোড স্ক্যানের উপর জোর দিতে হবে। অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ভোটার কার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত অ্যাপগুলি ব্যবহারে জোর দিতে হবে।
নিউ দিঘার একটি হোটেলের ম্যানেজার জন্মেঞ্জয় প্রহরাজ বলেন, ‘‘পুলিশ হোটেলে এসেছিল। নির্ধারিত অ্যাপের মাধ্যমে আধার কার্ডের বারকোড স্ক্যান করে পর্যটকদের পরিচয়পত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। তার পরেই পর্যটকদের হোটেলে থাকার ঘর দেওয়া যাবে। কোনও পর্যটকের দেওয়া তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে তাঁকে হোটেলে বসিয়ে রেখেই সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি থানায় জানাতে বলা হয়েছে।’’ জন্মেঞ্জয় জানান, দিঘার হোটেলে ‘দুষ্কৃতী’ ধরা পড়ার ঘটনার পর থেকে হোটেল ব্যবসায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এখন প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্দেশিকা মানতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’’
পুলিশের নয়া নির্দেশ নিয়ে দিঘা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে পুরনো ও নতুন দিঘায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০০-রও বেশি হোটেল রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন। একটি হোটেলে আসা পর্যটকের দেওয়া পরিচয়পত্র নথিভুক্ত করেই তাঁকে ঘর দেওয়া হয়। তবে সেই পরিচয়পত্র সঠিক কি না, তা যাচাইয়ের মতো পরিকাঠামো নেই।’ তাঁর অভিযোগ, “দেশের মধ্যে কেবল মাত্র দিঘাতেই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নির্দেশিকা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পর্যটকদের তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে আপলোড করা, পরিচয়পত্র সঠিক কি না খতিয়ে দেখার মতো উন্নত মানের কর্মী ও প্রযুক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এত নিয়মকানুন চাপানো হলে দিঘায় হোটেল ব্যবসা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’