ইডেনে রবিবার ২২২ রান তুলেও ম্যাচ হারতে পারত কলকাতা নাইট রাইডার্স। দল হেরে গেলে দায় নিতে হত শ্রেয়স আয়ারকেই। তাঁর ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচ। দলকে জেতানো আন্দ্রে রাসেলকে ভুলে মিচেল স্টার্কের উপর ভরসা করতে গিয়েই দলকে ডোবাচ্ছিলেন শ্রেয়স।
ভুলটা শ্রেয়স করলেন ১৭তম ওভার শেষে। জয়ের জন্য রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর তখন প্রয়োজন ৩৭ রান। ধ্বংসাত্মক মেজাজে থাকা দীনেশ কার্তিক ভয় ধরাচ্ছিলেন কেকেআর শিবিরে। সেই সময় আন্দ্রে রাসেলের ২ ওভার বাকি। আগের ২ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার যে বল হাতে ফর্মে রয়েছেন সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। মনে করা হচ্ছিল তাঁকে দিয়েই পুরো ৪ ওভার করানো হবে। কিন্তু শ্রেয়স তেমনটা ভাবলেন না। তিনি ১৮তম ওভারটা রাসেলকে না দিয়ে বল তুলে দিলেন হর্ষিত রানার হাতে। তখনই স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসেলকে এক ওভার দিয়ে অন্য ওভারটি মিচেল স্টার্ককে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
১৮তম ওভারে হর্ষিতকে বল করতে দেখেই প্রমোদ গুনতে শুরু করে দিয়েছিলেন কেকেআরের সমর্থকেরা। কারণ ২ ওভারে ৩৬ রান দেওয়া স্টার্কের উপর এখন কলকাতার ম্যানেজমেন্ট ছাড়া আর ভরসা নেই কারও। হর্ষিত ১৭তম ওভারে মাত্র ৬ রান দিলেন। সেই সঙ্গে আউট করলেন সুয়স প্রভুদেশাইকে।
১৯তম ওভারে রাসেল বল করতে এলেন। তিনি ১০ রান দিলেও তুলে নিলেন দীনেশ কার্তিকের উইকেট। তাতেই কেকেআরের হাতে প্রায় চলে এসেছিল ম্যাচ। কারণ আরসিবি-র লোয়ার অর্ডার সে ভাবে রান করতে পারছে না। কিন্তু কেকেআর সমর্থকদের ভয় তখনও কাটেনি। কারণ শেষ ওভারে বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ২১ রান আর বল করবেন স্টার্ক। সমর্থকদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা প্রমাণ করে দেন ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বোলার। স্টার্ককে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন করণ শর্মা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে করণের গড় ১৮.৪৮। স্ট্রাইক রেট ১২৫.২৭। ন’নম্বরে ব্যাট করতে নামা সেই করণ দ্বিতীয় বলটি ব্যাটের ঠিক জায়গায় লাগাতে পারেননি। পরের দু’টি বলে আবার ছক্কা মারলেন তিনি। ৪ বলে ১৮ রান দিয়ে দিলেন স্টার্ক। হারের আশঙ্কায় কাঁপছে কেকেআর। ভাগ্য ভাল, পরের বলেই করণ স্টার্কের হাতে ক্যাচ দিয়ে দেন। শেষ বলে জয়ের জন্য বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ছিল ৩ রান। কিন্তু ১ রানের বেশি করতে পারেনি তারা।
ম্যাচ শেষে হর্ষিত রানা বলেন, “এই উইকেটে জোরে বলের বিরুদ্ধে ব্যাট করা সহজ। আমরা সেই কারণে বলের গতি কমিয়ে দিচ্ছিলাম। এটা আমাদের পরিকল্পনা ছিল।” সেই পরিকল্পনার কথা কি স্টার্ক জানতেন না? তিনি প্রতিটি বলই করলেন জোরে। তাঁর গতিই সুবিধা করে দিচ্ছিল আরসিবির জন্য। ৩ ওভারে ৫৫ রান দেওয়া স্টার্কের ওভারে কেকেআর ম্যাচ জিতল। কিন্তু অস্ট্রেলীয় পেসারের কারণেই ম্যাচ হারতে পারত দল। অধিনায়ক শ্রেয়সও দায় এড়াতে পারেন না। রাসেলকে ১৮তম ওভারে বল দিলে শেষ ওভারটিও তাঁকে দিয়ে করাতে পারতেন শ্রেয়স। তাহলে স্টার্ককে বল করতেই হত না। ১৯তম ওভারে সে ক্ষেত্রে বল করতেন হর্ষিত। কিন্তু ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বোলারকে যে কেকেআর গিলতেও পারছে না, আবার উগরাতেও পারছে না। গলার কাঁটা হয়ে রয়ে গিয়েছেন স্টার্ক। মেন্টর গৌতম গম্ভীর তো বলেই দিয়েছেন, “দল যখন জিতছে, তখন স্টার্ককে নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। দল হারলে যদিও অন্য কথা বলতাম।”
স্টার্কের ভাগ্য ভাল, রবিবার ইডেনে কলকাতা জিতেছে। হারলে হয়তো রবিবার রাতেই গম্ভীর অন্য কথা বলে দিতেন।