হিন্দু বাঙ্গালিকে বাঁচতে হলে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন একান্ত প্রয়োজন #IndiaSupportsCAA

প্রথমে বাঙ্গালির সংজ্ঞা ঠিক করে নেওয়া যাক। কারণ কে বাঙ্গালি তা ঠিক না করে নিলে নিজেদের বাঙ্গালি বলে দাবি করে ও জনসংখ্যার জোরে তারাই বাঙ্গালি বলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে। এটা কোনো দূর ভবিষ্যতের ভয় দেখানোর গল্প নয়, এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালি অনেকটাই এক হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে আমরা বাঙ্গালি বলতে বাংলাদেশের জনসাধারণকেও বোঝাই। একটাই কারণ সবার মাতৃভাষা বাংলা। বামপন্থী সেকুলারদের দাপটে আমরা বলতে ভুলে গেছি যে ভাষা এক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বঙ্গপ্রদেশকে ভাগ করতে হয়েছে হিন্দু ও মুসলমানের দেশে। আর তারপর ৭০ বছর ধরে মুসলমানের দেশ পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ থেকে মেরেধরে, জমি কেড়ে, মেয়েদের উপর অত্যাচার চালিয়ে, মন্দির ভেঙে হিন্দুতাড়ানো চলছেই। সুতরাং আমাদের পরিষ্কার করে সব ক্ষেত্রে বলতে হবে বাঙ্গালি মনে হিন্দু বাঙ্গালি, যে বাঙ্গালির অস্তিত্ব মুসলমান বাংলাভাষীরা সম্পূর্ণনিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। এটা যে স্রেফ কোনো সাম্প্রদায়িক দোষারোপ নয়, তার জ্বলন্ত প্রমাণ গত ৭০ বছরে পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশে বাঙ্গালি হিন্দু জনসংখ্যা ২৮ শতাংশ থেকে কমে ৮ শতাংশ হয়ে যাওয়া। কিন্তু বাঙ্গালি হিন্দুর নিজের ভূমি পশ্চিমবঙ্গে যখন গত ৭০ বছরে হিন্দুর সংখ্যা ৮০ শতাংশ থেকে কমে ৬৯ শতাংশ হয়ে। যায় তখন কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে— তা হলো নাগরিকত্ব। সংশোধন আইন এবং তার পরে এন আর সি বা নাগরিকপঞ্জী নবীকরণ।
বাংলাদেশ হবার পর ১৯৭২ থেকে যে। উদ্বাস্তুরা পশ্চিমবঙ্গে আসতে থাকলেন আগের মতো তাদের জন্য কোনো আইনি। রক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। ফলে সেই উদ্বাস্তুরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাননি। যদিও প্রায় সবার কাছেই ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকলেও সেগুলি দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যায় না। গত কয়েক দশক ধরে উদ্বাস্তু সংগঠনগুলি নাগরিকত্বের দাবি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে বারবার করে এসেছে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কোনো প্রধান রাজনৈতিক দল সিপিআইএম, তৃণমূল ও কংগ্রেস উদ্বাস্তুদের এই স্বীকৃতির জন্য কোনো প্রচেষ্টা নেয়নি। গত ৪৫ বছর ধরে কেন্দ্রে মূলত রাজত্ব করেছে কংগ্রেস দল। তারা এই বিষয়টি নিয়ে কখনো মাথা ঘামায়নি। বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯ জুলাই ২০১৬-তে লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-২০১৬, পেশ করেন। এই সংক্ষিপ্ত বিলটিতে বলা হয়েছে যে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের যাঁদের পাসপোর্ট আইন, ১৯২০ ও বিদেশি আইন ১৯৪৬-এ থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে তাদের আর অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য করা হবে না। সংখ্যালঘু বলতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন ও পারসিদের উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে তারা ভারতীয় নাগরিক হবার জন্য যোগ্য হলেন। বিলটি পেশ হবার পর কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিআইএমের আপত্তির জন্য বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। বিলটি সামান্য সংশোধন করে আবার লোকসভায় পেশ করা হয় ও ৮ জানুয়ারি ২০১৯-এ লোকসভায় তার পাশ হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনিশ্চয়তায় বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হয়নি। যেহেতু এরপর লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, ফলে এবার বিলটি আবার নব নির্বাচিত লোকসভায় ও রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। এই আইনটি পাশ হয়ে গেল হিন্দু উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা মুসলমান। অনুপ্রবেশকারীরা এই অধিকার পাবে না। বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়নের কোনো আইনি জটিলতা থাকবে না।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হবার কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে এসে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাসে বিপর্যয় ঘটিয়েছে। ১৯৫১-র ১৯ শতাংশ মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সিপিআই(এম) ও তৃণমূল কংগ্রেসনীরব থাকে, কারণ অনুপ্রবেশকারীরা এই দলগুলির শক্তি। উদ্বাস্তু বিষয়ে বললে বাংলাদেশের ইসলামি অত্যাচার প্রকাশিত হয়ে যায় যা পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীরা কেউ চায় না। বাংলাদেশ গঠনের পর বিশেষত বামফ্রন্ট সরকার আসার পর দলে দলে বাংলাদেশি মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে থাকে। ৬ মে, ১৯৯০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত লোকসভায় বলেছিলেন যে, ভারতে ১ কোটি বাংলাদেশি আছে। ১১ অক্টোবর ১৯৯২-এর গণশক্তি পত্রিকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু লিখলেন, ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বিএসএফ ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন বাংলাদেশিকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মোবাইল টাস্ক ফোর্স ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯৮৫ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এরপর ১৪ জুলাই ২০০৪ সালে কংগ্রেসের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ জয়সোয়াল লোকসভায় জানালেন যে ভারতে মোট ১ কোটি ২০ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৫০ জন বাংলাদেশি রয়েছে। অবশেষে ২০০৫-এ লোকসভাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমস্যা ও সিপিএম তাদের দিয়ে ভোট করানোর অভিযোগ তুলে স্পিকারকে কাগজপত্র ছুঁড়ে হৈচৈ বাঁধালেন। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ যে ভয়ানক সমস্যা তা জ্যোতি বসু থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই জানেন। জ্যোতি বসুরা বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে মূলত ভোটের খেলা খেলছিলেন ক্ষমতায় থাকার জন্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ করবার ইসলামি পরিকল্পনায় মদত দিচ্ছেন।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন আগামী লোকভায় পাশ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জী নবীকরণ শুরু হলে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি মুসলমানরা চিহ্নিত হবেন। এদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। ফলে এরা রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন। এরা আর ভারতীয় নাগরিক থাকবেন না, ফলে সরকারি কোনো সুবিধা যেমন ১০০ দিনের কাজ, গৃহঋণ, শিক্ষার সংরক্ষণ, চাকরি কিছুই আর পাবেন না। ফলে এই অনুপ্রবেশকারীরা ধীরে ধীরে বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। এই অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। এরা বিতাড়িত হলে বাঙ্গালি হিন্দু আবার পশ্চিমবঙ্গে ৮০ শতাংশ হবে। বাঙ্গালি হিন্দু আবার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মের অঙ্গন থেকে ইসলামি প্রাধান্য দূর করে ভারতীয় সভ্যতার আলোয় উজ্জ্বল করে তুলতে পারবে। বাঙ্গালি হিন্দু নিজেদের একমাত্র বাঙ্গালি বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। ঘোষণা করবে বাঙ্গালির ইতিহাস ৫০০০ বছরের ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ, সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে, বেদ উপনিষদের দর্শন, আর্যভট্টের বিজ্ঞান, বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বাস, রামায়ণ মহাভারত— এইসব বাঙ্গালির উত্তরাধিকার। এই উত্তরাধিকার যারা স্বীকার করেন না তারা বাংলায় কথা বললেও বাঙ্গালি নন, তারা বাংলাভাষী মাত্র তারা বাংলাদেশি। সেজন্য হিন্দু বাঙ্গালিকে বাঁচতে হলে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন একান্ত প্রয়োজন।
মোহিত রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.