বিষাক্ত প্লাস্টিকে তৈরি ফুটপাথ, আসবাব! সৌজন্য বাঙালি গবেষক
সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে দেশ জুড়ে উদ্যোগ। প্লাস্টিক মাটিতে মেশে না। তার জেরেই যত দূষণ। বিষাক্ত সেই প্লাস্টিকেই এখন তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ফুটপাথ ও রুফ টাইলস, আসবাবপত্র। কোয়েম্বাটুরের অমৃতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি গবেষকের চেষ্টায় অসুর প্লাস্টিক এখন আশীর্বাদ।
প্লাস্টিক। ছোট্ট এই শব্দই এখন পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের মাথা ব্যথার বড় কারণ। কারণ, প্লাস্টিক পচনশীল নয়। মাটিতে মিশে যায় না। এর জেরে বছরের পর বছর তা পরিবেশে দূষণের বিষ ছড়ায়। এর মোকাবিলার উপায় খুঁজছেন শান্তনু ভৌমিক। কোয়েম্বাটুরের অমৃতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও রিসার্চ হেড।
পঞ্চাশ মাইক্রনের কম পুরু একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সবচেয়ে ক্ষতিকারক। অথচ এই প্লাস্টিক রিসাইকেল করেই শান্তনু ভৌমিক তৈরি করেছেন টাইলস, আসবাব। যা ওজনে হালকা। টেকসই। লক্ষ ক্লিন ও গ্রিন ইন্ডিয়া। গবেষকের ছাত্ররা নিজেরাই শিল্প গড়ে তুলেছেন। বাড়ছে কর্মসংস্থান। কথা চলছে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও। গবেষকের পরবর্তী টার্গেট ভারতীয় সেনা।
গবেষক বলছেন, এভাবেই একটু একটু করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হোক অসুর প্লাস্টিককে। তবেই বাঁচবে সভ্যতা। সবুজ , সুন্দর হয়ে উঠবে পরিবেশ।
প্লাস্টিক ঠেকাতে শান্তনু মডেল গ্রহণ করল সিকিম
প্লাস্টিক দূষণ থেকে বাঁচতে বাঙালি বিজ্ঞানীর সাহায্য নিচ্ছে সিকিম সরকার।
সম্প্রতি সিকিম সরকারের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্লাস্টিক দ্রব্য রিসাইকল করা এবং তার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে অধ্যাপক শান্তনু ভৌমিকের। প্লাস্টিক রিসাইকল করে তা দিয়ে আসবাব বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে হাজির ছিলেন সিকিমের মুখ্যসচিব অলোককুমার শ্রীবাস্তব, গ্রামন্নোয়ন সচিব সিএস রাও-সহ চার জেলার কর্তারা।
শান্তনু বলেন, ‘আলোচনার শেষে এ বিষয়ে খুবই উৎসাহ প্রকাশ করেছেন সিকিমের মুখ্যসচিব। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেন, কাজটি বাস্তবায়ন করার জন্য।’
ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র তথা কোয়েম্বাটুরের অমৃতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোস্পেস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শান্তনু ভৌমিক বলেন, ‘প্রত্যেক দিন প্রায় ১০ হাজার জলের বোতল ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। সিকিমের তিস্তা-রঙ্গিত নদীতে এ ধরনের প্রচুর প্লাস্টিকের বোতল পড়ে রয়েছে। সেগুলি সংগ্রহ করে তাকে রিসাইকল করে ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র যেমন, চেয়ার-টেবিল, দরজা-জানলা প্রভৃতি বানানো যাবে। এর ফলে এলাকা যেমন পরিষ্কার হবে, তেমনই স্থানীয় কর্মসংস্থানেরও বৃদ্ধি ঘটবে।’
পর্যটক রাজ্য সিকিমের লোকসংখ্যা ৬ লাখের কিছু বেশি। কিন্তু বছরে গড়ে সেখানে ১০ লাখ পর্যটক বেড়াতে যান। তার জেরে জলের বোতল থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবহার এবং প্লাস্টিক দূষণে জেরবার সিকিম। প্লাস্টিকের প্রভাবে ধীরে ধীরে নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে সেখানকার নদীগুলিও। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে সিকিম সরকারের। কিন্তু বাঙালি বিজ্ঞানীর প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের প্রস্তাব নতুন দিশা দেখাচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই ছোট্ট রাজ্যটিকে। উল্লেখ্য, এর আগে হালকা বুলেট প্রুফ জ্যাকেট তৈরি করে সাড়া ফেলেছিলেন শান্তনু।
ঝাড়গ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বিষয়ক সেমিনার
ঝাড়গ্রাম সচেতন নাগরিক মঞ্চের ব্যবস্থাপনায় ঝাড়গ্রাম শহরের বলাকা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বিষয়ক আলোচনা সভা। মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার বিষয়ে নতুন পথের দিশারী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহারযোগ্য কম ওজনের ব্রুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী ড.শান্তনু ভৌমিক।
উপস্থিত অতিথিদের সমবেত প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উদ্বোধনী পর্বে হাজির ছিলেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম, শিক্ষারত্ন অমৃত নন্দী, ঝাড়গ্রাম ঋষিপূরম মাঠের উপাবর্তন মহারাজ ও সৌবস্তিক মহারাজ।
ঝাড়গ্রাম শহরের দেড় শতাধিক পরিবেশ প্রেমীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রতিনিধিরা।
বিশ্বকে প্লাস্টিকমুক্ত করার দিশা দেখাচ্ছেন বাঙালি বিজ্ঞানী শান্তনু ভৌমিক
বিশ্বকে প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত করার দিশা দেখাচ্ছেন একজন বাঙালি বিজ্ঞানী। নাম শান্তনু ভৌমিক। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে আসবাব ও অন্য ব্যবহার্য দ্রব্য তৈরি করে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ কমানোই তার লক্ষ্য। ইতোমধ্যেই তার পরিকল্পনা নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেছে বিশ্বের নানা দেশে। বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলো থেকে ডাক পাচ্ছেন তিনি। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা শান্তনু ভৌমিক চেষ্টা করছেন নিজের দেশকেও প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত করে তোলার। হিমালয়ের পাদদেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করার পরিকল্পনা তাঁর। পাশে পেয়েছেন নিজের জনা তিনেক ছাত্রকে। যারা নিজেদের উদ্যোগেই শুরু করেছে দেশকে প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত করার কাজ। তার জন্য প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে রিসাইকেল করা হচ্ছে। এতে নানা ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন তৈরি করা যাচ্ছে, তেমনই প্লাস্টিকমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকেও।
শান্তনু ভৌমিক জানাচ্ছেন, এই দেশে দৈনিক প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয় পনেরো হাজার টনেরও বেশি। এসব বর্জ্যরে সঙ্গে নারিকেল ও কলা গাছের তন্তু ব্যবহার করে তৈরি করা যায় নানা আসবাব, এমনকি নৌকাও। এতে শুধু প্লাস্টিক বর্জ্যকেই রিসাইকেল করে পরিবেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করা যাবে তাই শুধু নয়, বরং কর্মসংস্থানও হবে বিপুল। বর্জ্য সংগ্রহ, নারিকেল ও কলাগাছের তন্তু সংগ্রহ, আসবাব নির্মাণ প্রতিটি ধাপেই কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। আর এই গোটা প্রক্রিয়ায় খরচও আহামরি নয়। অন্য দেশও তার প্রকল্পকে গ্রহণ করেছে। নিজেরাও বেসরকারিভাবে এ দেশে শুরু করছেন একই প্রচেষ্টা। পরিবেশঘাতক প্লাস্টিকের ব্যবহার একদিন কমবে, প্লাস্টিকমুক্তও হবে গোটা দেশ। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন শান্তনু ভৌমিক।