সিএএ আতঙ্কে কলকাতার তরুণ আত্মঘাতী! পরিবার জানাল, প্রয়োজনীয় ‘কাগজ’ না থাকাতেই এমন সিদ্ধান্ত

সিএএ নিয়ে আতঙ্কের কারণে আত্মঘাতী হয়েছেন নেতাজিনগরের যুবক। এমনটাই অভিযোগ করেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের প্রতিনিধি দল নেতাজিনগরে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবে।

মৃত যুবকের নাম দেবাশিস সেনগুপ্ত (৩১)। তিনি সুভাষগ্রামে মামাবাড়িতে গিয়েছিলেন। বুধবার সেখান থেকে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দেবাশিসের পরিবার দাবি করেছে, সিএএ আইন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ভুগছিলেন তিনি। সেই কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁদের অনুমান।

মৃতের পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে সিএএ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন দেবাশিস। তাঁর কাছে সিএএ-র জন্য প্রয়োজনীয় ‘কাগজ’ ছিল না। তাই নাগরিকত্ব হারানোর ভয় পাচ্ছিলেন তিনি। বার বার পরিবারের সদস্যদের বলছিলেন, তাঁকে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হলে কোথায় যাবেন!

দেবাশিসের মৃত্যুর পর নেতাজিনগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর বাবা। সেই অভিযোগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, সিএএ কার্যকরের ঘোষণার পর থেকে তাঁর পুত্র ‘মারাত্মক মানসিক চাপে’ ছিলেন। প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় দুশ্চিন্তা ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

এই ঘটনার পর কেন্দ্রের মোদী সরকারের সমালোচনা করেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা বার বার বলছিলাম সিএএ এবং এনআরসি দু’টি আইন দেশে বেআইনি ভাবে প্রবর্তনের চেষ্টা চলছে। আইনগুলি অগণতান্ত্রিক। জনমানসে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে এবং আতঙ্ক ছড়াবে। আমাদের চিন্তা যে অমূলক নয়, তা প্রমাণিত হল। ৩১ বছরের দেবাশিস আত্মহত্যা করলেন সিএএ-র ভয়ে। সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর পরিবার স্পষ্ট করেছে, দেবাশিস সিএএ নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। বার বার বলতেন, এনআরসি এবং সিএএ-র জন্য নাগরিকত্ব চলে যাবে না তো! এটাই তাঁর আত্মহত্যার কারণ। প্রধানমন্ত্রী কি এগুলো দেখছেন? এই রক্তপিপাসার কি শেষ নেই। বিবেকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি প্রশ্ন করুন নিজেকে।’’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নেতাজিনগরে যাবে। মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা। তৃণমূলের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে মোদী সরকারকে আক্রমণ করা হয়েছে। তারা লিখেছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী রক্তের জন্য বেরিয়ে পড়েছেন। কিছুতেই ওঁকে থামানো যাবে না।’’

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘এনআরসির সময়ে অসমে যা হয়েছিল, এ বার তা পশ্চিমবঙ্গেও হচ্ছে। সেখানেও এনআরসির ভয়ে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। একই কারণে দেবাশিস সেনগুপ্ত আত্মঘাতী হয়েছেন। এটা অমানবিক। আমার মনে হয় এই আইন অপ্রয়োজনীয়। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনও স্বার্থ জড়িয়ে নেই। ভোটের কারণে এই আইন আনা হয়েছে।’’

বিজেপি অবশ্য দেবাশিসের মৃত্যুর জন্য তৃণমূলের সিএএ-বিরোধী প্রচারকেই দায়ী করছে। বিজেপি নেতা প্রণয় রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দিনের পর দিন সিএএ নিয়ে মানুষকে প্ররোচিত করেছেন। ভয় দেখিয়েছেন। এই মৃত্যুর জন্য তিনিই দায়ী। অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত এবং তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.