সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তি তো হয়েছে সদ্য। অথচ বাস্তব হল, রাম লালা-র জন্য ভব্য মন্দির নির্মাণের কাজ কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে অনেককাল আগে থেকেই। এ যেন রামের জন্মের আগেই রামায়ণ রচনা!
নব্বইয়ের দশকের গোড়া সেই যখন করসেবা আন্দোলন শুরু হল মন্দিরের নকশা তৈরি হয়ে গিয়েছিল তখনই। রাম মন্দিরের কাঠামো গড়ার কাজও সেই সময় থেকে শুরু করে দিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অধীনস্থ অছি পরিষদ রাম জন্মভূমি ন্যাস কমিটি।
কেমন হতে পারে মন্দির?
এই প্রশ্নটুকু করলেই হল। বাকিটা গড়গড় করে মুখস্থ বলে দিতে পারে অযোধ্যা। মন্দির নগরী অযোধ্যা তো মন্দিরময়। সব মন্দিরের গায়ে লেগে প্রাচীন ইতিহাস। তার সঙ্গেই মিশে গিয়েছে হবু মন্দিরের হিসেব নিকেশ।
প্রায় তিন দশক আগে এই মন্দিরের নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়। সরযূ নদীর পাশেই বিশালাকার মন্দির হবে। তার কাজ চলছে করসেবকপুরমে। অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদর দফতর থেকে পায়ে হাঁটা পথ করসেবকপুরম। মূল মন্দির তথা ২.৭৭ একর আয়তনের একদা বিতর্কিত পরিসর থেকে দূরত্ব তিন কিলোমিটার পথ। সেখানেই রয়েছে মন্দির নির্মাণের কর্মশালা।
অটোয় চেপে রামঘাট চৌরাস্তায় যেতে যেতে অটোচালক রামবিলাস মুখস্থ বলে গেলেন। শুনে মনে হচ্ছিল তিনিই যেন হবু মন্দিরের প্রধান স্থপতি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই মন্দিরটির দৈর্ঘ্য হবে ২৬৮ ফুট এবং প্রস্থে হবে ১৪০ ফুট। ১২৮ ফুটের উচ্চতার এই মন্দিরের প্রথম তলা ১৮ ফুট উঁচু এবং দ্বিতীয় তলার উচ্চতা ১৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। এর প্রথম তলায় বিরাজমান থাকবেন রামলালা। দ্বিতীয় তলায় থাকবে রাম দরবার। সেখানে রাম-লক্ষ্মণ-সীতার মূর্তি স্থাপন হবে। মন্দিরে ছ’টা ভাগ থাকবে। অগ্রদ্বার, সিংহদ্বার, নৃত্যমণ্ডপ, রংমণ্ডপ, পরিক্রমা এবং গর্ভগৃহ। মন্দির তৈরি করতে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ঘনফুট পাথর ব্যবহার করা হবে।
অটো থেকে নেমে দেখি সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। যে কারও চোখ কপালে উঠবে। এগিয়ে এলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী হনুমানদাস মিশ্র। এমন ভাবে হবু মন্দিরের বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন, যেন এটাই নিয়ম। নোটবইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রাম বিলাসের জ্ঞানে একটুও খামতি নেই। হুবহু এক। তবে বাড়তি অনেক কিছুই জানা গেল। জানা গেল গোলাপি পাথরের কথা।
গোটা মন্দিরটাই গড়া হচ্ছে নজরকাড়া গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে। রাজস্থানের ভরতপুর থেকে এসেছে সেই গোলাপি বেলেপাথর। এখনও আসছে ভরতপুরের বাঁশিপাহাড়পুর থেকে। গোলাপি বেলেপাথরগুলি খোদাই করার কাজ প্রায় ৬০ শতাংশই নাকি হয়ে গেছে। এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে একটি পাথর খণ্ডের সঙ্গে অন্যটি জুড়ে দিলেই মন্দিরের কাঠামো তৈরি হয়ে যাবে।
সারি সারি রাখা আছে সেই সব পাথর। কোনওটায় খোদাই করা রয়েছে ফুল-লতাপাতা, কোনওটিতে দেব-দেবীর ছবি। মন্দিরের প্রতি তলাতেই ১০৬টা করে স্তম্ভ মিলিয়ে মোট ২১২টি স্তম্ভ থাকবে। স্তম্ভও আবার তিন ধরনের। প্রতিটি স্তম্ভেই যক্ষ ও যক্ষ্মিণীর মূর্তি খোদাই করা থাকবে।
কর্মশালার স্বেচ্ছাসেবক হনুমান দাস জানালেন, মন্দিরের গর্ভগৃহটি হবে আটকোণা। গর্ভগৃহের উপরে বেদিতে স্থাপিত হবে রামলালার মূর্তি। আর মূর্তির উপরে ১৩২ ফুট উঁচু গম্বুজ। গোলাপি পাথরের মন্দিরে দরজা হবে চন্দনকাঠের। এ ছাড়াও থাকবে ২৪টি দরজা।
মন্দির কবে হবে তা জানতে অবশ্য এখনও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে অযোধ্যা মনে করে মন্দির তৈরি তো কবেই শুরু হয়ে গেছে। এখন শুধু স্থানান্তরের অপেক্ষা। আর এই মন্দির বানাতে বানাতে কর্মশালাও যেন হয়ে উঠেছে এক মন্দির। রামলাল দর্শনে আসা মানুষের ঢল এখানেও আসেন মাথা ছোঁয়াতে।