হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে গর্ভপাত করাতে গিয়ে তিন মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার মৃত্যু হয়েছে! উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের এজি কলোনির ঘটনা। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গ্রাম-মফস্সলে কী ভাবে এখনও এ ধরনের বেআইনি ক্লিনিক চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার নাম টুকি বিশ্বাস। গত ৬ মার্চ টুকিকে অশোকনগরে মনোজ বিশ্বাস নামে এক হাতুড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গর্ভপাত করানোর জন্য। প্রথমে ওষুধ দিয়ে টুকিকে ছেড়ে দেন মনোজ। পরের দিন আবার আসতে বলেন। সেই মতো ৭ মার্চ মনোজের ক্লিনিকে যান টুকি। তখন তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। এর পর ৮ মার্চ সন্ধ্যায় অত্যধিক রক্তপাতে তাঁর মৃত্যু ঘটে বলে অভিযোগ। মৃতার পরিবারের অবশ্য দাবি, অপারেশন টেবিলে টুকির মৃত্যু হয়েছে। মনোজের গাফিলতিতেই ওই বধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ মৃতার পরিবারের।
অভিযোগ পেয়ে অশোকনগর থানার পুলিশ মনোজকে গ্রেফতার করে। টুকিকে যিনি মনোজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই দিলীপ দেবনাথকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের দাবি, বেশির ভাগ সময়েই স্থানীয় লোকজনের মদতে এ ধরনের চিকিৎসাকেন্দ্র চলে। বার বার সচেতনতা শিবির, প্রসূতির স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে লাগাতার প্রচারের পরেও পরিস্থিতি বদলায় না। প্রশ্ন উঠছে, যেখানে প্রশাসন দাবি করে যে, ইদানীং অধিকাংশ প্রসবই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়, প্রতিটি গ্রামে-মফস্সলে প্রসূতিদের খুঁটিনাটি বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্ট দিতে হয় আশাকর্মীদের, সেখানে দিনের পর দিন কী ভাবে গর্ভপাত-ক্লিনিক চলছিল? তা হলে কী স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই?
স্থানীয় সূত্রে খবর, মনোজ বিজেপির তফসিলি মোর্চার সভাপতি। একাধিক বার জেলও খেটেছেন বলে দাবি। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য গুপি মজুমদার বলেন, ‘‘উনি অবৈধ ব্যবসা করেন। সবার সামনে উনি বিজেপি করেন। এই সব বিজেপি নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’’ পাল্টা বিজেপির বারাসাত সাংগঠনিক জেলার তফসিলি মোর্চার সভাপতি প্রভাত মজুমদার বলেন, ‘‘ওঁকে ডাক্তার হিসেবে চিনি না। ওঁকে মনোজ বিশ্বাস বলেই চিনি। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। আইন আইনের পথে চলবে।’’