মার্চের শুরুতেই তাঁকে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল লন্ডনের রাস্তায়। এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের মোবাইলে তোলা ভিডিও চিত্রে দেখা গিয়েছিল, পলাতক ভারতীয় ব্যবসায়ী নীরব মোদী মোটা গোঁফ রেখেছেন। তাঁর গায়ে বহুমূল্য জ্যাকেট। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি কেবল ‘নো কমেন্টস’ বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার জানা গেল, পিএনবি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নীরব মোদীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে লন্ডনে। তিনি যে কোনও দিন গ্রেফতার হতে পারেন। তবে এখনই তাঁকে ভারতে পাঠানো হবে না। ব্রিটেনের আদালত যদি মনে করে তবেই তাঁকে বন্দি প্রত্যর্পণ করা হবে।
অভিযোগ, জালিয়াতি করে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছিলেন মণিরত্নের ব্যবসায়ী নীরব মোদী ও তাঁর কাকা মেহুল চোকসি। সিবিআই ওই কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত শুরু করার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান দু’জন। ব্রিটিশ সংবাদপত্রের রিপোর্টে জানা যায়, নীরব মোদী লন্ডনের পশ্চিমে অভিজাত সোহো অঞ্চলে নতুন করে হিরে-জহরতের ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁকে একটি ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স নম্বর দেওয়া হয়েছে। তার সাহায্যে তিনি অনলাইন ব্যাঙ্কিং-এর সাহায্য নিচ্ছেন। প্রশ্ন ওঠে, ভারতে যিনি ওয়ান্টেড, তিনি ব্রিটেনে বৈধভাবে কাজ করার অধিকার পান কোথা থেকে? ভারত সরকার কি তাঁর সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারকে বিস্তারিত জানায়নি?
২০১৮ সালের অগাস্টে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট ব্রিটিশ সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল, নীরব মোদীকে বন্দি করে ভারতে পাঠানো হোক। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র সচিব সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতেই নীরব মোদীকে গ্রেফতার করা হবে। তারপর ওয়েস্টমিনস্টার কোর্টে শুরু হবে বিচার। কোর্ট ইচ্ছা করলে তাঁকে ভারতে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুমতি দিতে পারে। তবে নীরব মোদী পরে সেই রায় উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।
ভারতে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার নীরব মোদীর মতো পলাতক অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আদৌ উদ্যোগী নয়। সেজন্যই নীরব মোদী লন্ডনে প্রকশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারছেন। এমনও অভিযোগ উঠেছিল, সরকারের কয়েকজন কর্তাব্যক্তির সঙ্গে যোগসাজশ করেই পিএনবি কেলেঙ্কারির দুই নায়ক দেশ ছেড়ে পালাতে পেরেছেন। কিন্তু সোমবার জানা যায়, নীরব মোদীকে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের তরফে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তারই ফল ফলতে চলেছে এতদিনে।