বর্ষার আগে ও পরে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপগুলির অধিকাংশই পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। এই এলাকায় তৈরি হওয়া নিম্নচাপগুলির ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকে ৮০ শতাংশ। মূলত বর্ষার আগে অর্থৎ এপ্রিল ও মে মাস এবং বর্শার পরে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সব থেকে বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে দেখা যায় এই তিন সাগরের এলাকায়।
নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার এই হার কমে যায় বর্ষাকালে। এমন কি জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার এই হার মাত্র ১০ শাতংশ। এই নিম্নচাপগুলির আবার অনেকরকম ভাগ থাকে। বিভিন্ন স্তরে এগুলি হয়ে ওঠে ঘূর্ণিঝড়ে। নিম্নচাপ থেকে তৈরি হয় গভীর নিম্নচাপ। এর পরের ধাপেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এরপর শক্তি বাড়তে বাড়তে এটি হয়ে ওঠে শক্তিশালী থেকে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।
বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার ছুঁলে সেটিকে একটি নাম দেয়া হয়। যেমন বুলবুলের নামকরণ হয়েছিল। এরপর এটা ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটার বেগের ব্যবধানে থাকলে সেটিকে একটি ঝড় বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ১১৭ কিলোমিটারের বেশি হয়, তখন এটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের আবার এক থেকে পাঁচ মাত্রার ৫টি আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়।
২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যের বছরগুলিতে ২০১৫ সালে মোট ১২টি নিম্নচাপ তৈরি হয় যার মধ্যে মাত্র ৪টি ঘুর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ২০১৮ সালে নিম্নচার তৈরি হয় ১৪টি। এর অর্ধেক পরিণত হয় গুর্ণিঝড়ে। এদিকে ২০১৯ সালে মোট ৯টি নিম্নচাপ তৈরি হয়। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৭টি পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। এর ফলে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় পরিণত হওয়ার হারের নিরিখে বিগত বেশ কয়েক বছরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ২০১৯ সাল।
সাধারণত বঙ্গোপসাগরে আরব সাগর থেকে বেশি নিম্নচাপ তৈরি হয়। যদিও এই বছর উল্লেখযোগ্য ভাবে সংখ্যাটা আরব সাগরের ক্ষেত্রে বেশি। এই কয়েকদিন আগেই কিয়ার ও মাহা তৈরি হয় আরব সাগরে। এর আগে বঙ্গোপসাগরে বর্ষার আগে তৈরি হয় ফণী ও পাবুক। আর কয়েকদিন আগেই তাণ্ডব ছড়ায় বুলবুল।
এদিকে শেষবার আরব সাগরে একই বছরে চারটে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল ১৯০২ সালে। এবং ২০১৯-এর দেড় মাস বাকি থাকতেই সেই সংখ্যা ছোঁয়া হয়ে গিয়েছে।