তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন! তাই তাঁর কাছে এসেছে নরেন্দ্র মোদীর সই করা চিঠি (শুভেচ্ছাপত্র)। সেখানে লেখা, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণের জন্য আমি আপনার পুরো পরিবারকে অভিনন্দন জানাই। এই বাড়িটি আপনার প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রমের ফসল।’
মোদীর এই চিঠিতে অবাক পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি বলছেন, ‘‘কেন এমন চিঠি আমার কাছে এল, বুঝতে পারছি না। ভুল করে এসেছে কি না, সেটাও বুঝছি না।’’ আপনি কি আবাসের বাড়ি পেয়েছেন? সিদ্ধার্থের জবাব, ‘‘পাওয়ার প্রশ্নই নেই।’’ সিদ্ধার্থর বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার পানিহাটিতে। কর্মসূত্রে তিনি মেদিনীপুর শহরের শেখপুরায় সরকারি আবাসনে থাকেন। তিনি পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীকে। সৌম্যশঙ্করও মানছেন, ‘‘ওঁর কাছে প্রধানমন্ত্রীর সই করা চিঠি এসেছে। চিঠিটা উনি আমাকে দেখিয়েছেন।’’
সিদ্ধার্থ জানান, তাঁর মোবাইলে বাংলায় একটি মেসেজ এসেছে। সেখানেই রয়েছে ওই অভিনন্দন পত্রের লিঙ্ক। তাতে ক্লিক করে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পাওয়া যাচ্ছে। আবাস যোজনায় গ্রামীণ এলাকার মতোই শহরে গরিব মানুষদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। গ্রামে পঞ্চায়েত ও শহরে পুরসভা এর তত্ত্বাবধান করে। উল্লেখ্য, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় এই প্রকল্পের টাকা পাঠানো বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। তা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির টানাপড়েনও চলছে। বেশ কয়েকবার এই জেলার বিভিন্ন গ্রামেও ঘুরে গিয়েছে কেন্দ্রীয় দলও।
তবে শহর এলাকায় বাড়ির টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। পুরসভা সূত্রে খবর, মেদিনীপুর শহরে এখন আবাসের প্রায় দু’হাজার বাড়ি তৈরি চলছে। সব মিলিয়ে ১,৯৯৪টি বাড়ির জন্য এসেছিল ৯ কোটি ৮৪ লক্ষ ৯০ হাজার। প্রথম কিস্তির টাকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাড়ি পিছু খরচ ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্র দেয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও রাজ্য দেয় ১ লক্ষ ৯৩ হাজার। আর উপভোক্তাকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া রাজ্য ও পুরসভা এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও ৩৬ হাজার ৮০০ টাকা করে ব্যয় করে।
স্বাস্থ্যকর্তার কাছে ওই চিঠি পৌঁছনোর কথা জেনে নড়ে বসেছে মেদিনীপুর পুরসভা। পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, উপভোক্তা তালিকায় সিদ্ধার্থ দত্ত নামের কেউ নেই। তা হলে সিদ্ধার্থের কাছে চিঠি এল কেন? মেদিনীপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান সৌমেন খানের কটাক্ষ, ‘‘এ নিয়ে বিজেপিই ভাল বলতে পারবে! সামনে ভোট। প্রচারের জন্য ওরা যে উপভোক্তা নয়, তাঁকেও চিঠি পাঠাচ্ছে।’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস পাল্টা বলছেন, ‘‘অবিলম্বে তদন্ত প্রয়োজন। তৃণমূলের কেউ ওঁর নাম করেই বাড়ি হাতিয়ে নেয়নি তো?’’