অশান্ত সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ বার জনতার ‘দুয়ারে’ পৌঁছে গেল পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগ শোনার জন্য সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। আপাতত বেড়মজুর এলাকার কাঠপোলে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য, শুক্রবার সন্দেশখালির এই বেড়মজুর এলাকাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তবে অন্যান্য এলাকাতেও খুব শীঘ্রই পুলিশের এই ক্যাম্প চালু হবে বলে জানিয়েছেন বারাসত রেঞ্জের ডিআইজি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকা ভিত্তিক সেই ক্যাম্পগুলিতে স্থানীয়দের অভিযোগ শুনবে পুলিশ। যে কোনও ধরনের অভিযোগ জানানো যাবে ক্যাম্পে। তার উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি ক্যাম্পে একজন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার থাকবেন। এছাড়াও থাকবেন উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। তবে এক সঙ্গে অনেকে না এসে ২-৩ জন করে এসে অভিযোগ জানানোর জন্য স্থানীয়দের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখযোগ্য, শুক্রবার সন্দেশখালির এই বেড়মজুর এলাকায় গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুক্রবার সকালে সন্দেশখালির কাছারি এলাকায় শাহজাহান শেখের এক ‘অনুগামী’র মাছের ভেড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। বেড়মজুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত এই কাছারি এলাকা। বেড়মজুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও হাতে লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় মহিলারা। দখল হয়ে যাওয়া জমিজমা ফেরতের দাবি জানান তাঁরা। পাশাপাশি, শাহজাহানকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। এই পরিস্থিতিতে ওই দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
বেলার দিকে পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের গাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন গ্রামের মহিলারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এলাকা থেকে তাঁদের স্বামী এবং ছেলেদের তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ, যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও ছিলেন। গ্রামবাসীরা দাবি জানান, ভাঙচুরের ‘মিথ্যা’ অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েক জনকে আটকও করে। বাড়ি থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রথমে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকানো হয়। এর পর এক মহিলা পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।
অশান্তির খবর পেয়ে বেড়মজুরে পৌঁছেছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। এলাকা ঘুরে তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, ‘‘আইন নিজের হাতে নিলে আমরা গ্রেফতার করব। কেউ আইন অমান্য করেছেন মানে পাল্টা কেউ আইন নিজের হাতে নেবেন, তা হবে না। কোনও অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান। যা পদক্ষেপ করার আমরা করব।’’ এর পরেই শনিবার সকাল থেকে বেড়মজুর এলাকায় শুরু হল পুলিশের ক্যাম্প।