শাহজাহান শেখ একজন অত্যন্ত ‘ক্ষমতাবান’ মানুষ বলে আদালতকে জানাল ইডি। সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার আগাম জামিনের বিরোধিতা করে ইডি আদালতকে বলে, ‘‘উনি এতটাই ক্ষমতাবান যে ১৫ মিনিটের মধ্যে একডাকে ৩০০০ লোক জড়ো করতে পারেন।’’ ইডির এই অভিযোগের পাল্টা শাহজাহানের আইনজীবী যুক্তি দেন, ‘‘শাহজাহান তো শয়তান।’’ এত লোক এখন সন্দেশখালিতে জড়ো হচ্ছেন, তাতে কোনও দোষ নেই। দোষ শুধু শাহজাহানের। শাহজাহান ‘শয়তান’। আর তিনি হলেন সেই শয়তানের আইনজীবী!
উল্লেখ্য, শয়তানের আইনজীবী বাক্যবন্ধটি নেহাত কথার কথা নয়। আইনি পরিভাষায় ‘শয়তানের আইনজীবী’ বলা হয় তাঁকেই, যিনি সার্বিক ভাবে বদনাম হওয়া কোনও বিষয় বা ব্যক্তির হয়ে কথা বলেন আদতে তাঁর আসল রূপটি প্রকাশ্যে আনার জন্য। তবে শাহজাহানের আইনজীবী সত্যিই কী ভেবে কথাটি বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়।
শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে শুনানি ছিল রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের আগাম জামিনের মামলার। সেখানেই ইডি এবং শাহজাহানের আইনজীবীর মধ্যে দীর্ঘ তর্ক হয় শাহজাহানের আগাম জামিন দেওয়া নিয়ে।
ইডি আদালতকে বলে, ‘‘শাহজাহান হল ‘ব্লু আইড বয় অফ দ্য টাউন’ (অর্থাৎ সবার চোখের মণি)। তিনি এতটাই ক্ষমতাবান যে প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। একডাকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ৩০০০ লোক জড়ো করতে পারেন।’’
শাহজাহানের আইনজীবী: ইডি প্রথম যে দিন তল্লাশিতে গিয়েছিল সে দিন শাহজাহান জানতেনই না যে স্থানীয়রা এই ভাবে প্রতিরোধ করবেন। অথচ সেই ঘটনা ঘটেছে। আবার এখন সেই স্থানীয় গ্রামবাসীরাই শাহজাহানের গ্রেফতারি চেয়ে পথে নেমেছেন। শাহজাহানের বাড়ি ভাঙচুর করছে। আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। তা হলে কোনটা ঠিক? এমন কী ঘটল যে পুরো বিষয়টা বদলে গেল? গ্রামের লোকরা শাহজাহানের গ্রেফতারি চাইতে শুরু করল? শাহজাহান যদি ইডিকে আটকাতে গ্রামবাসীদের জড়ো করতে পারেন তবে গ্রামবাসীরা তাঁর বাড়ি ভাঙতে কেন আসবে?
শাহজাহানের আইনজীবী আদালতকে: এখন যা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না। সেই সব মেনে নেওয়া হচ্ছে। অথচ তখন যা হয়েছিল, তাতে শাহজাহানের দোষ! সেই যুক্তিতে তাঁকে ‘ব্লু আইড বয়’ বলা হচ্ছে? বলা হচ্ছে এত ‘ক্ষমতাবান’ যে ১৫ মিনিটে ৩০০০ লোক জড়ো করতে পারে? এই দ্বিচারিতা কেন?
ইডির আইনজীবী: শাহজাহানের বিরুদ্ধে পুরনো চারটি মামলা রয়েছে, তার পরেও গ্রেফতার হননি। ন্যাজাট, সন্দেশখালি থানায় বাড়ি ভাঙচুর, বাড়িতে আগুন, হত্যা, সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাবান বলেই প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। আগেও ওঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। দরকার হলে কেস ডায়েরি দেখাতে পারি।
ইডির আইনজীবী আদালতকে: দোষী না হলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন? আদালতে সওয়াল ইডির।
শাহজাহানের আইনজীবী: ওঁকে এখনও আইনত পলাতক বলা যায় না।
ইডির আইনজীবী (হালকা ভাবে): আগাম জামিনের বিরোধিতা করছি কারণ, জামিন পেলে যদি লন্ডনে চলে যান তা হলে মামলা ভেস্তে যেতে পারে।
শাহজাহানের আইনজীবী: শাহজাহান তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি, যদি তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
ইডির আইনজীবী: যদি কিছুই না থাকে, তা হলে হাজিরা দিক, আসুক। আগাম জামিন দিলে তদন্তের ক্ষতি হবে।