কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষ হরিয়ানার শম্ভু সীমানায়, ১৪ হাজার বিক্ষোভকারীকে থামাতে কাঁদানে গ্যাস

নিজেদের দাবিদাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে বুধবার থেকে আবারও আন্দোলনের তেজ বাড়িয়ে তুললেন কৃষকেরা। পঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমানা পেরিয়ে ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছেন তাঁরা। বুধবার সকালে প্রায় ১৪ হাজার কৃষক শম্ভু সীমানা পের হতে গেলেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। নামানো হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী। কিছুতেই সীমানা পেরিয়ে কৃষকদের রাজধানীতে ঢুকতে দিতে নারাজ পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। অন্য দিকে, কৃষকেরা ট্র্যাক্টরগুলিকে ‘অস্থায়ী ট্যাঙ্ক’-এ পরিণত করে এগিয়ে যাচ্ছেন সীমানার দিকে।

কেন্দ্রীয় সরকার বার বার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ‘সমাধান’ খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাঁচ বার বৈঠকে বসেও কোনও রফাসূত্র বার হয়নি। কেন্দ্রের প্রস্তাব মানতে নারাজ বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রের ওই প্রস্তাব ‘নজর ঘোরানো’র চেষ্টা। তার পরই আবারও আন্দোলনের ঝাঁঝ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় কৃষক সংগঠনগুলি। সেই মতো প্রস্তুতিতেও কোনও খামতি রাখেননি তারা।

শম্ভু সীমানা পেরিয়ে তাঁদের দিল্লি ঢুকতে পুলিশি বাধা যে আসবে, তা জানতেন আন্দোলনকারীরা। তাই সেই বাধা মোকাবিলা করার জন্য ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। ট্র্যাক্টরগুলিকেই ‘অস্থায়ী ট্যাঙ্ক’ হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকেরা। সেখানে লোহার শিট বসানো হয়েছে। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল থেকে রক্ষা পেতে তার আড়ালেই আশ্রয় নিচ্ছেন কৃষকেরা। সেই সঙ্গে পুলিশের জল কামান প্রতিরোধ করতেও প্রস্তুত তাঁরা। আনা হয়েছে জেসিবি মেশিনও।

অন্য দিকে, পুলিশও কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ আটকাতে বিভিন্ন পন্থা নিয়েছে। সিমেন্টের ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও কাঁটাতার দেওয়া হয়েছে। শিপিং কন্টেনার দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে গোটা রাস্তা। হাইওয়েতে পাতা হয়েছে পেরেকের চাদর। কাঁদানে গ্যাস, জল কামানের মতো ‘অস্ত্র’ দিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে কৃষকেরা কাঁদানে গ্যাসের থেকে বাঁচতে বস্তা ভিজিয়ে রাখার প্রস্তুতিও নিয়েছেন।

অম্বালার ঘর্ঘরা নদীর দুই পারেও পুলিশ ‘দুর্গ’ তৈরি করেছে। যাতে সেই পথে শম্ভু সীমানা পার হতে না পারেন কৃষকেরা, তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা তাঁদের ট্রলিগুলিতে মাটি ভর্তি বস্তা বোঝাই করে নিয়ে এসে নদীর উপর একটি অস্থায়ী সেতুও তৈরি করেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও হরিয়ানা সরকারকে আন্দোলন রুখতে ‘কঠোর’ নীতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়াও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পঞ্জাবের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছে অমিত শাহের মন্ত্রক। হরিয়ানা পুলিশের ডিজিপি বলেছেন, ‘‘কৃষকেরা যদি জোরপূর্বক ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন, তবে পুলিশেরও আইনি পথে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’ সেই সঙ্গে তিনি মহিলা, শিশু এবং প্রবীণ নাগরিকদের আন্দোলন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে হরিয়ানা পুলিশের তরফে।

দিল্লি পুলিশও নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজধানীর রাজপথে যানজট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দিল্লি পুলিশের তরফে কয়েকটি রাস্তা এড়িয়ে চলার জন্য সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর তিন সীমানা চত্বরে নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করার ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.