বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কবীর সুমন(Kabir Suman)। কিছুদিন আগেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সংগীতশিল্পী, তাঁর অসুস্থতার খবর শুনেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অনুরাগীরা। তবে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তিনি। আর সুস্থ হয়েই তাঁর এক সিদ্ধান্তের কথা জানান কবীর সুমন। ফেসবুকে এক পোস্টে এই সংগীতশিল্পী জানালেন, নিজের শেষ জীবনটা বাংলাদেশেই কাটাতে চান। কবীর সুমনের ইচ্ছা, তিনি মারা গেলে যেন তার মরদেহ বাংলাদেশেরই কোনো হাসপাতালে কাজে লাগানো হয়।
কবীর লেখেন, ‘এই কথা আমি আগেও অনেক বার বলেছি। তাও ফের বলছি কারণ আমার কথায় কোনও কাজ হচ্ছে না। এমন নয় যে সনাতনধর্মীয় নামধারী কোনও বঙ্গজ আমায় সম্মান করেন না। মুষ্টিমেয় কিছু বঙ্গজ করেন। কিন্তু বড্ড বেশি সংখ্যক সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ আমায় ঢাক পিটিয়ে ঘৃণা করেন, এবং তা জাহির করে সনাতনী সুখ পান। আর এক শ্রেণীর সনাতন-বঙ্গজ আছে যারা আমায় কবীর নামে ডাকতে চায় না। এরা, যা দেখেছি “বামপন্থী”। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আমার নাম ভারতের সংবিধান মোতাবেক, ঘোষিতভাবে কবীর সুমন। ফার্স্ট নেম কবীর। সার্নেম সুমন’।
সংগীতশিল্পী লেখেন, ‘আমার আয়কর ফাইল র্যাশন কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার আই ডি, আধার কার্ড সর্বত্র এই নামটাই আছে। এই নামে আমি ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে মাননীয় সি পি আই এম সদস্য ডক্টর সুজন চক্রবর্তীকে হারিয়ে দিয়ে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলাম। ভারতের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম বাংলায় তা সকলের জানার কথা। তা সত্ত্বেও সি পি আই এম করা বঙ্গজরা আমায় আমার বর্জিত নামে ডাকেন। শুধরে দিলেও শুধরে নেন না। আর নকশালপন্থী দলের বঙ্গজ নেতাও (নামে সনাতনধর্মীয়) আমায় ভুলেও কবীর সুমন বলেন না, কবীর তো নয়ই। তিনি অবিরাম সুমন সুমন করে যান। এদিকে সকলেই নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার বলতে গদগদ।
আর একদল আছে, যারা আমায় গানওলা বলে ডাকে। কী বলি’।
তিনি আরও লেখেন, ‘যা বুঝেছি, আমায় নির্দ্বিধায় সম্মান করেন যাঁরা, প্রাপ্য সম্মানটুকু দেন যাঁরা তাঁরা সদলবলে বাংলাদেশের নাগরিক। পশ্চিম বঙ্গের সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের মতো বাংলাদেশের কেউ আমায় সমানে, যে কোনও উপায়ে অপমান করে যান না। আর মাসখানেক পরে আমি ৭৫ পুরো করে ৭৬ এ পড়ব। কলকাতা আমার প্রথম প্রেম। কলকাতা নামটা আমার গানে যতবার এসেছে আর কারুর কবিতায় গানে তা আসেনি। আমায় যাঁরা বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁরা সকলেই কলকাতার সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ। তাঁদের ছেড়ে থাকতে পারব না। কিন্তু, কারুর কোনও ক্ষতি না করা সত্ত্বেও সমানে অপমানিত হতে হতে এবারে আমি চাইছি এই দেশটা, মায় এই শহরটাও ছেড়ে চলে যেতে। এখানকার সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের মধ্যে অন্তত দুজন ফেসবুকে ঘোষণাও করেছেন “হাসপাতাল থেকে ফিরে না এলেই ভাল হত।” তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু লেখেনি। আমার শেষ জীবন আমি যদি বাংলাদেশে থেকে আমার মাভাষার সেবা করতে পারতাম, বাংলা খেয়াল শেখাতে পারতাম আমার আজকের স্বাস্থ্য যতটা অনুমতি দেবে ততটা অন্তত।
এমনকী মৃত্যুর পরেও তাঁর ইচ্ছা জানান কবীর। তিনি লেখেন, ‘আমি agnostic (অজ্ঞেয়বাদী)। মরে যাবার পর কোনও ধর্মীয় শেষকৃত্যের প্রশ্নই উঠবে না। আমার দেহ দান করা আছে। বাংলাদেশে মরলে সেখানকার কোনও হাসপাতালে আমার শরীর কাজে লাগানো যেতে পারে। আজও আমি ফেসবুকে আমার সম্পর্কে সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের খিস্তি পড়েছি। এতে আমার মধ্যে কোনও উত্তেজনা জাগেনি। জাগছে এই “বিদেশটা” ত্যাগ করে ভাষা মতিনের দেশে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া, সেই দেশের কাজে লাগার ইচ্ছে। প্রকাশ্যে সাহায্য ও আশ্রয় চাইছি। এই রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, রাজ্য ক্লাসিকাল মিউজিক কনফারেন্সে আমায় বাংলা খেয়াল গাইতে দিয়েছেন। এরাজ্যের একজন শিল্পীও কিন্তু সংহতি জানাননি আমার সঙ্গে। যতদিন বেঁচে থাকব শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব, তাঁর পক্ষে থাকব। কেউ যদি পারেন আমায় সাহায্য করুন। জয় বাংলা! জয় বাংলা খেয়াল!’