প্রযুক্তির অগ্রগতি, একই সঙ্গে আশীর্বাদ এবং অভিশাপও। সম্প্রতি নেটদুনিয়া দেখছে প্রযুক্তির এক নোংরা খেলা। যার পোশাকি নাম ‘ডিপফেক ভিডিয়ো’ (Deepfake Video)! কী এই ডিপফেক ভিডিয়ো? কিছু অসাধু নেটাগরিকরা টার্গেট করছেন সমাজের হুজ হুদের। তাঁদের মুখ এক রেখে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বদল ঘটিয়ে, জন্ম দিচ্ছেন এক নতুন শরীরের। গত মাসে ডিপফেক ভিডিয়োর জালে জড়ানো হয়েছিল ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) ও তার মডেল-কন্য়া সারা তেন্ডুলকরকে (Sara Tndulkar)। এবার কৃত্তিম মেধার ফাঁদে ধরা পড়লেন বিরাট কোহলিও (Virat Kohli)। সম্প্রতি সোশ্য়াল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে বিরাট একটি বেটিং অ্য়াপের সাহায্য়ে বিরাট মুনাফা অর্জন করছেন স্বল্প টাকা বিনিয়োগ করে! এসবই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম মেধারই নোংরা খেলা। কোহলির এই ভিডিয়ো দেখে নেটাগরিকরা চমকে গিয়েছেন। কিন্তু এই ভিডিয়োর বিন্দুমাত্র সত্য়তা নেই। যদিও কোহলি এই ব্য়াপারে এখনও কোনও বিবৃতি দেননি। এই মুহূর্তে ভারত-ইংল্য়ান্ড পাঁচ ম্য়াচের টেস্ট সিরিজ খেলছেন। তবে কোহলি পারিবারিক কারণে রয়েছেন ক্রিকেট থেকে দূরে।
গত মাসে সচিন-সারার মুখ নিয়ে একটি গেমিং অ্যাপ নকল ভিডিয়ো তৈরি করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, আধুনিক ক্রিকেটের ডন অনলাইন গেমের প্রচার করছেন। সেখানে তিনি উদাহরণ দিচ্ছেন যে, তাঁর কন্য়া সারাও নাকি এই গেম খেলে প্রতিদিন ১.৮ লক্ষ টাকা করে অর্জন করছেন। খেলার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারলেই নাকি ধনবর্ষা হচ্ছে। সচিনের চোখেও এই ভিডিয়ো পড়েছিল। তিনি এক্স (সাবেক ট্যুইটার) অ্যাকাউন্টে এই কুকীর্তির জন্য় ফুঁসছিলেন। সচিন ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘এই ভিডিওগুলো ভুয়ো। প্রযুক্তির ব্যাপক অপব্যবহার দেখলে বিরক্ত লাগে। এই ধরনের ভিডিও, বিজ্ঞাপন এবং অ্যাপগুলিকে প্রচুর পরিমাণে রিপোর্ট করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করুন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে সতর্ক হতে হবে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুল তথ্য এবং ডিপফেকের এই বিস্তার বন্ধ করতেই হবে।’ সচিন তাঁর ভিডিয়োয় ট্যাগ করেছিলেন কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ও আইটি মন্ত্রককে ও এই বিষয়ক মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরকে। এর সঙ্গেই সচিন ট্যাগ করেছেন মহারাষ্ট্র পুলিসের সাইবার শাখাকেও। এরপরেই পুলিস নড়েচড়ে বসে পদক্ষেপ নিয়েছিল।
গতবছর নভেম্বরে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে দেখা গিয়েছিল যে, ক্রিকেটার শুভমন গিলের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন সারা। যে ছবি আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্য়াল মিডিয়ায়। ঘটনাচক্রে মূল ছবিটি ছিল সারা ও অর্জুন তেন্ডুলকরের। ডিপফেক ও শুভমন ইস্য়ুতে মুখ খুলেছিলেন। ইনস্টায় বিবৃতি দিয়ে লিখেছিলেন, ‘সোশ্য়াল মিডিয়া অসাধারণ একটা জায়গা। যেখানে আমরা আনন্দ-দুঃখ এবং প্রতিদিনের কার্য়কলাপ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিই। যাই হোক, প্রযুক্তির অপব্য়বহার দেখতে বিরক্তিকর লাগে। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় যা দেখানো হয়, তা সত্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্য়তা থেকে বহু দূরে। আমি আমার বেশ কিছু ডিপ ফেক ছবি দেখেছি, যা বাস্তব থেকে বহু দূরে। আমার ছদ্মবেশে এক্সে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য়। আমার এক্সে কোনও অ্য়াকাউন্ট নেই। আশা করি এক্স ব্য়াপারটি খতিয়ে দেখবে এবং সেই অ্য়াকাউন্টগুলিকে সাসপেন্ড করবে। বিনোদন কখনই সত্যের মূল্য দিয়ে হওয়া উচিত নয়। আসুন আমরা বিশ্বাস এবং বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে যোগাযোগকে উৎসাহিত করি’। ডিপফেকের জালে একাধিক সেলেবই জড়িয়ে পড়ছেন।