গাছের গায়ে কিউআর কোড! মোবাইলে স্ক্যান করলেই সেই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম, গণ থেকে যাবতীয় তথ্য ফুটে উঠবে স্ক্রিনে। বই পড়ার ঝক্কি নেই। বাগানে বেড়াতে বেড়াতেই পড়া হয়ে যাবে একটা গোটা চ্যাপ্টার। সবুজের সঙ্গে পড়ুয়াদের সখ্য তৈরি করতে এবং ডিজিটাল পাঠে উৎসাহ দিতে এই অভিনব পদ্ধতি চালু করেছে অন্ধ্রপ্রদেশের পিবি সিদ্ধার্থ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের বোটানি বিভাগ।
অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, মোবাইল শুধুমাত্র সেলফি তোলার জন্য নয়। প্রযুক্তির প্রয়োগ শিক্ষায় থাকা দরকার। তাই এমন ভাবনা। গাছের গায়ে কিউআর কোড স্ক্যান করার উৎসাহ তৈরি হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এখন তারা অফ পিরিয়ডে বা টিফিনের সময় মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক করে না। বরং কোড স্ক্যান করে পড়াশোনা করে।
কলেজ ক্যাম্পাসে মোট ২০টি ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। তা ছাড়াও রয়েছে আরও নানা রকমের লতা-গুল্ম। প্রতিটি গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম, গণ, তাদের পাতা, ফুল-ফলের বৈশিষ্ট্য, ভেষজ উপকারিতা সবকিছুর ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি করেছেন শিক্ষকরা। এই কাজ করতে সময় লেগেছে এক মাস। তারপর প্রতিটি গাছের গায়ে কিউআর কোড সেঁটে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেটে কিউআর কোডের স্ক্যানার অজস্র। যে কোনও একটি ডাউনলোড করে নিলেই এই কোড খোলা যাবে।
কলেজের বোটানি বিভাগের প্রধান শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেছেন, “বোটানির বই অসংখ্য। এত গাছপালার বিবরণ সব বই থেকে পড়া সম্ভব নয়। সারাদিন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকলে পড়ুয়াদের প্রকৃতিকে জানার ইচ্ছা চলে যায়। তাই আমরা কিউআর কোডের মাধ্যমে প্রকৃতিকে জানার, চেনার সুযোগ করে দিচ্ছি পড়ুয়াদের।”
শ্রীনিবাস জানিয়েছেন, ভেষজ উদ্ভিদগুলির বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা সবিস্তারে স্টোর করা আছে ডেটাব্যাঙ্কে। বই ঘেঁটে ছাত্রছাত্রীরা যতটা জানতে পারত, তার থেকে অনেক বেশি জানতে পারবে তারা। আলাদা আলাদা করে প্রতিটা গাছও চিনতে পারবে। শুধু একগাদা তথ্য নয়, হাতেকলমে কাজ শেখানোরও লক্ষ্য রয়েছে এই কলেজের। বর্তমান ডিজিটাল যুগে পেশার ক্ষেত্রে যা খুবই প্রয়োজনীয়।
‘‘এই কিউআর কোড ইনস্টল করলেই প্রতিটা গাছের ব্যাপারে সব তথ্য একসঙ্গে হাতের মুঠোয় এসে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে আর আলাদা করে বই খুলে দেখার দরকার পড়ছে না। আগে লাইব্রেরিতে ঘুরে ঘুরে আমাদের বই যোগাড় করতে হত। শিক্ষক ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ,’’ বলেছেন তৃতীয় বর্ষের বিএসসি ছাত্রী এন যামিনী।
পিবি সিদ্ধার্থ কলেজের ডিরেক্টর ভি বাবুরাও জানিয়েছেন, কলেজে সবুজায়নের কর্মসূচি চলছে। আরও বেশি গাছ লাগানো হবে। আগামী বছর শতাধিক গাছে কিউআর কোড বসানো হবে।
মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির সেন্ট পলস ক্যাম্পাসে ৩৪টি প্রজাতির গাছের গায়ে কিউআর কোড লাগানো আছে। শুধু পড়ুয়া নয়, জনসাধারণের জন্যও খোলা থাকে এই ক্যাম্পাস। পথচলতি যে কেউ চাইলেই এই কোড স্ক্যান করে নির্দিষ্ট গাছের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন।