আবাসনের ভিতরে বুথ চায় বিজেপি, শহুরে ভোটারদের টানতে নয়া ভাবনা পদ্মের, কর্মীদের প্রস্তুতির নির্দেশ

প্রতি লোকসভা নির্বাচনের সময়েই বৃদ্ধি পায় দেশের মোট ভোটারসংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ে বুথও। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে দেশে মোট বুথ ছিল প্রায় ন’লাখ। পাঁচ বছর পরে ২০১৯ সালে সেটা বেড়ে হয় ১০ লাখের মতো। এ বার সেটা বেড়ে ১২ লাখ হতে পারে।

এতটা বৃদ্ধি হলে তার পিছনে থাকবে বিজেপির এক দাবি। এখন দেশে ১০ লাখ ৫০ হাজারের মতো বুথ রয়েছে। বিজেপি চায়, সেই সবের বাইরেও দেশের সব বড় ও মাঝারি শহরের আবাসনগুলির ভিতরে হোক বুথ। যেখানে ভোট দেবেন ওই সব আবাসনের বাসিন্দারা। আর সেটা হলে এক লাফে ১২ লাখ হয়ে যেতে পারে দেশের মোট বুথের সংখ্যা।

ইতিমধ্যেই বিজেপি এমন দাবি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। সর্বভারতীয় স্তরেই এই দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, আবাসনের বাসিন্দাদের ‘বুথমুখী’ করতে ওই সিদ্ধান্ত নিক কমিশন। এর ফলে শহরাঞ্চলে ভোটদানের হার বাড়বে। কমিশন এমন সিদ্ধান্তের কথা এখনও পর্যন্ত না জানালেও বিজেপি নেতৃত্ব দলের নেতা-কর্মীদের বুথসংখ্যা বাড়ছে ধরেই নিয়ে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন বলে পদ্মশিবির সূত্রে জানা গিয়েছে।

গত শনি ও রবিবার দিল্লিতে বিজেপির ‘রাষ্ট্রীয় অধিবেশন’-এ এই বিষয়ে একপ্রস্ত আলোচনাও হয়েছে। শনিবার অধিবেশনে মূল বক্তৃতা ছিল সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা ও প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। দ্বিতীয় দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তৃতা করেন। এর মাঝে অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও লোকসভা নির্বাচনে দল কোন পথে চলবে, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ তাঁর বক্তৃতায় নির্বাচন কমিশন বুথের সংখ্যা বাড়াতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। বড় আবাসনের ভিতরে কেন বুথ থাকা প্রয়োজন, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি তা হবে ধরে নিয়ে কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও জানান। আবাসনের ভিতরে বুথ হলে সব রাজ্যেই বিজেপিকে যে সেই ভাবে সংগঠন সাজাতে হবে, তা স্মরণ করিয়ে দেন সন্তোষ।

এমনটা হোক চাইছে রাজ্য বিজেপিও। বাংলায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শিশির বাজোরিয়ার দাবি, বড় আবাসনে বুথের প্রয়োজন শুধু রাজনীতি নয়, গণতন্ত্রের জন্যই প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, ‘‘কমিশন সব সময়েই চায় ভোটদানে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ুক। সে জন্য সারা বছর ধরেই প্রচার চালানো হয়। অনেক সময়েই দেখা যায়, ভোটদানে অনীহা থাকে আবাসনের বাসিন্দাদের। যদি আবাসনের ভিতরে বুথ থাকে, তা হলে তাঁরাও ভোট দিতে আসবেন।’’ শিশির আরও বলেন, ‘‘কমিশন এখন প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোট সংগ্রহ করে। আবাসনের ভিতরে বুথ হলে ভোটদানের হার অনেকটাই বাড়বে বলে আমরা মনে করি।’’

শুধুই কি এই কারণে? না কি রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার অঙ্কেও বিজেপি আবাসন এলাকার ভিতরে বুথ চাইছে? শিশির বলেন, ‘‘সবচেয়ে সুবিধা তো হবে আবাসনের বাসিন্দাদের। এক একটি আবাসনে গড়ে ৬০০ ভোটার তো থাকেনই। ফলে বুথ বানানো খুব একটা অসুবিধার নয়। তবে সবটাই কমিশনের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে।’’ এ সবের মধ্যে তৃণমূলকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি শিশির। তিনি বলেন, ‘‘এই রাজ্যের শাসকদল তো অনেক আবাসনের বাসিন্দাদের ভোটের দিনে বের হতেই দেয় না। ইচ্ছা থাকলেও অনেকে ভোট দিতে পারেন না। সেই ইচ্ছুক ভোটারদের প্রতি সম্মান দেখাতেও আবাসনের ভিতরে কোনও জায়গায় বুথ করা দরকার।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.