সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারে খাটেন তাঁরা। সপ্তাহের সাত দিনই ‘কাজ’ করেন। বলতে গেলে কোনও ‘ছুটি’ নেই তাঁদের। গৃহবধূদের কি সেই পরিশ্রমের কোনও ‘পারিশ্রমিক’ নেই? শুক্রবার এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘‘পরিবারের অন্য উপার্জনকারীদের মতো এক জন গৃহবধূর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।’’ শীর্ষ আদালত আরও বলেছে যে, সংসারে গৃহবধূর অবদান আর্থিক দিক থেকে মাপা কঠিন।
১৭ বছরের পুরনো এক গাড়ি দুর্ঘটনা মামলায় শুনানিতে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ মামলাকারীর আর্থিক ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ বলে, ‘‘এক জন গৃহবধূর ভূমিকা পরিবারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি তাঁদের রোজকারের কাজ টাকার অঙ্কে বিচার করা হয়, তবে নিঃসন্দেহে গৃহবধূদের অবদান অমূল্য। শুধুমাত্র অর্থ দিয়ে তা বিচার করা যাবে না।’’
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে উত্তরাখণ্ডে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক মহিলার। তদন্তে জানা যায়, যে গাড়িতে ওই মহিলা যাচ্ছিলেন সেটা বিমা করা ছিল না। তাই মৃতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভার গাড়ির মালিকের উপরই বর্তায়। মোটর অ্যাকসিডেন্ট ক্লেম ট্রাইব্যুনালে মামলা করে তাঁর পরিবার। মৃতার পরিবারে ছিলেন তাঁর স্বামী এবং নাবালক সন্তান। ট্রাইব্যুনাল আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
তবে এই ক্ষতিপূরণের অর্থ বৃদ্ধি করার জন্য উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টে মামলা করেন মৃতার স্বামী। যদিও হাই কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। তার পরই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। শুক্রবার শীর্ষ আদালত মামলাকারীর আবেদন মেনে ক্ষতিপূরণ ছ’লক্ষ করার নির্দেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে কলকাতা হাই কোর্টও এমনই এক পথ দুর্ঘটনা মামলায় সংসারে গৃহবধূদের গুরুত্ব নিয়ে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছিল। হাই কোর্ট বলেছিল, গৃহবধূদের কখনও বেকার বলা যাবে না। তাঁরাও স্বোপার্জনকারী। সংসারে তাঁরা দিবারাত্রি যে কাজ করেন, তার মূল্য রয়েছে। সেই মামলায় মামলাকারীকে ছ’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত।