সন্দেশখালিতে ইডির উপর হামলার ঘটনা নিয়ে শাহের সঙ্গে কথা বোসের, সাক্ষাৎ পূর্বসূরি ধনখড়ের সঙ্গেও

সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপর হামলার ঘটনার পরেই কড়া বার্তা দিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৈঠকও করেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্তা রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক এবং স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং ডিডি রাজীব কুমারের সঙ্গে। এ বার সেই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে বলে জানালেন আনন্দ বোস। দিল্লি একটি ভিডিয়ো বার্তায় তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আইন আইনের নিয়মে চলবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

এখন দিল্লিতে রয়েছেন রাজ্যপাল বোস। রাজভবন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বর্তমানে দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষণ কথাও হয়েছে। যদিও দেখা করে বেরিয়ে বোস প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। প্রাক্তন রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর কী নিয়ে কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি। পরে সন্ধ্যায় রাজভবন সূত্রে জানা গেল, ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের সঙ্গেও দেখা করেছেন বোস। সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে কথা হয়েছে তাঁদের মধ্যে। এর পর ভিডিয়ো বার্তায় বোস বলেন, ‘‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি নির্দিষ্ট অপরাধের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি এটুকু বলতে পারি, আইন আইনের পথেই চলবে। যে সব কড়া পদক্ষেপ বিগত দিনে দেখা গিয়েছে, তা ভবিষ্যতেও জারি থাকবে।’’

গত ৫ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। তদন্তকারীরা যাঁর বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়েছিলেন, সেই শেখ শাহজাহানই ইডির হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। ঘটনার এত দিন পরেও কেন তাঁকে ধরা গেল না, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। ভর্ৎসনা করেছে কলকাতা হাই কোর্টও। সন্দেশখালির ঘটনার পর উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যের সাংবিধানিক কাঠামো যে ভেঙে পড়েছে, তা কেন ঘোষণা করছেন না রাজ্যপাল। এর পরেই ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন বোস। বলেছিলেন, “সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গণতন্ত্রে সভ্য সরকারের কর্তব্য বর্বরতা এবং অশান্তি বন্ধ করা। সরকার তার প্রাথমিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে, ভারতের সংবিধান অবশ্যই পদক্ষেপ করবে। রাজ্যপাল হিসেবে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ করব। জঙ্গলরাজ এবং গুন্ডাগিরি মূর্খদের স্বর্গেই চলতে পারে। বাংলা নৈরাজ্যের দেশ নয়।” শুধু তা-ই নয়, নবান্নকে রাজধর্ম পালন করার কথাও সেই সময় মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তলব করেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্তাকে। পরে শাহজাহানকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে বলে পুলিশকে নির্দেশও দিয়েছিলেন বোস।

ওই সময় বাংলায় ইডির উপর হামলার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। শাহের মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, সন্দেশখালির হামলার ঘটনা আদৌ ব্যতিক্রম নয়। অতীতেও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সময়ে একই ভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় দল বা বাহিনী। সূত্রের দাবি, অতীতে তদন্ত করতে যাওয়া সিবিআইয়ের একটি দলকে ঘরে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে দিল্লি থেকে পাঠানো দলকে একাধিক বার স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। রাজ্যে প্রচারে এসে হামলার শিকার হয়েছেন বিরোধী নেতারাও। মন্ত্রক কর্তাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে নিচু তলায় আইনের শাসন যে নেই, তা একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রক আগেই জানিয়েছিল, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.