রক্তাক্ত হংকং, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক থেকে বিক্ষোভকারীদের গুলি পুলিশের, প্রতিবাদের আগুন ছড়াচ্ছে দাবানলের মতো

দ্য ওয়াল ব্যুরো: রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, ছুরি হামলা, গুলি– বিক্ষোভের আগুন বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। রক্তাক্ত হচ্ছে হংকং। গত মাসে চিন সীমান্ত লাগোয়া সুয়েন ওয়ান জেলায় হংকংয়ের দাঙ্গা দমনকারী পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিল বছর আঠারোর এক ছাত্র। তার পর থেকে বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ফের গুলি চালাল পুলিশ। একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে। বুকে গুলি খেয়েও প্রতিবাদের স্লোগান তুললেন বিক্ষোভকারী যুবকরা।

সাই ওয়ান হো জেলায় রবিবার রাত থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলছে পুলিশের।  এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে মুখে কালো মুখোশ পরেই রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলেছিলেন কয়েকজন যুবক। তাঁদের পরনেও ছিল কালো পোশাক। প্রথমে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য় করে কাঁদানে গ্য়াস ছুড়তে থাকে। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুই যুবকের দিকে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। একজন মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন. অন্যজন গুলি খেয়েও উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছেন. রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা।

পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে একটি চোখ হারিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার এক মহিলা সাংবাদিক। পর পর এই দু’টি ঘটনার পর থেকেই পুলিশ-বিরোধী বিক্ষোভ আরও বেড়েছে হংকংয়ে। পুলিশ জানিয়ছে, একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েকজন আততায়ী। প্রত্যেকের পরনে ছিল সাদা টিশার্ট। এলোপাথাড়ি ছুরি হামলায় জখম হন মহিলা থেকে শিশু। গুরুতর জখম হন ডেমোক্র্যাটিক ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সেলার অ্যান্ড্রু চিউ।

তাইকু শিংয়ের সিটিপ্লাজ়ায় মানববন্ধন করেছিলেন প্রচুর মানুষ। পুলিশ সেই জমায়েত জোর করে তুলতে গেলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীদের একাংশ। বন্ধ করে দিতে হয় পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ আইস স্কেটিং রিঙ্ক। বিক্ষোভকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস আর জল কামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশের লাঠি চালনায় তাঁদের বহু সমর্থক রক্তাক্ত। আটক করা হয় প্রায় তিনশো বিক্ষোভকারীকে। পুলিশের পাল্টা দাবি, মুখোশ পরে আন্দোলন চালানো বেআইনি। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ মুখোশ পরে পথে নেমেছিলেন। তাই গ্রেফতার করতে হয়েছে তাঁদের। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে।

পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে হংকংয়ে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন থেকে চিনের কাছে হংকংয়ের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে এত বড় ও জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বহু বছর ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল হংকং। ২২ বছর আগে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় চিনের কাছে। তার পর থেকে স্বশাসিত এই অঞ্চলের মূল কর্তৃত্ব বেজিংয়ের হাতে। মাসখানেক আগে চিনের অনুগত ক্যারি ল্যাম প্রত্যর্পণ বিল আনার প্রস্তাব দেন পার্লামেন্টে। যা আইন হলে বিচারের প্রয়োজনে কোনও অপরাধীকে হংকং থেকে চিনে প্রত্যর্পণ করতে আর বাধা থাকবে না। এর পরেই ল্যামের ইস্তফা চেয়ে রাস্তায় নামেন মানুষজন। প্রবল প্রতিবাদে সেই বিল আনা স্থগিত রাখেন ল্যাম। তাতেও বিক্ষোভ থামেনি।

গত কয়েক মাস ধরেই কানাঘুষো যে, গোটা বিক্ষোভ পর্বে ল্যামের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট বেজিং তাঁকে সরাতে পারে। সরাসরি সে বার্তা এখনও না দিলেও প্রধান বাছাই প্রক্রিয়ায় রদবদলের ভাবনা সেই জল্পনাই আরও উস্কে দিয়েছে। একই ভাবে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ যাতে চিনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি করে জানতে পারেন, তার জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়েও বদল আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিক আইনেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। তবে চিনের হুঁশিয়ারি থাকলেও হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদের রাস্তা থেকে সরছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.