১৯৭৬-৭৭ সালে বাবরি মসজিদের নীচে কী রয়েছে তা জানার জন্য, প্রথমবার খনন কাজ শুরু করেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (ASI) ডিরেক্টর বিবি লালের নেতৃত্বে প্রত্নতত্ত্ববিদদের তিন জনের একটি দল। ওই দলে ছিলেন কে কে মহম্মদ। যিনি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ। তিনিই সার্ভে রিপোর্টে প্রথম জানান, বাবরি মসজিদের নীচে মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
তবে এই রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলি রিজভী একটি ইংরেজি দৈনিকের নিবন্ধে লেখেন, বিবি লালের দলে মহম্মদ কখনও থাকতে পারেনা। তবে বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তা তিনি স্বীকার করে নেন। এ প্রসঙ্গে মহম্মদ জানান, ১৯৭৬-৭৭ সালে রাম জন্মভূমির খনন কাজে একমাত্র মুসলিম প্রত্নতত্ত্ববিদ হিসেবে বিবি লালের দলে তিনি ছিলেন। কিন্তু মহম্মদের এই দাবিকে খারিজ করে দেন রিজভী এবং বিবি লালের তৈরি এএসআইয়ের (ASI) একটি বার্ষিক রিপোর্ট সামনে আনেন। যেখানে কোথাও মহম্মদের নাম নেই। যদিও কে কে মহম্মদ নিজেকে ওই দলের একটি অংশ বলে মনে করেন। তবে রিজভীর দাবি মতো, তিন জনের দলে যে তিনি ছিলেন, তা প্রমাণিত হয়নি।
আবার ২০০৭ সালে গাওলিয়রের মুসলিম মিউজিয়ামের ডিরেক্টর রমাকান্ত চতুর্বেদীর মতে, ১৯৭৬-৭৭ সালে বাবরি মসজিদ খনন কার্যে শিক্ষানবীশ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মহম্মদ। তিনি তখন এএসআইয়ের দিল্লি আর্কিওলজিক্যাল স্কুলের ছাত্র ছিলেন। খনন কার্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে ৭৫ বছরের চতুর্বেদী আরও বলেন, রামায়ণের পুরাতত্ত্ব নামে বিবি লালের নেতৃত্বের ওই খনন কাজটি হয়েছিল। একইভাবে এএসআইয়ের প্রাক্তন মুখ্য চিত্রগ্রাহক রাজনাথ কাউ দাবি করেন, লালের খনন কার্যে মহম্মদই ছিলেন একমাত্র মুসলিম। কিন্তু এএসআইয়ের বার্ষিক রিপোর্টে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি। কারণ তিনি তখন শিক্ষানবীশ ছিলেন। তাই সদস্য হিসেবে ওই প্রকল্পে তাঁর নাম নথিভুক্ত হয়নি।
ভোপালের প্রাক্তন প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ তথা আর্কিওলজিক্যাল স্কুলের মহম্মদের সহপাঠী অশোক পান্ডের মতে, ১৯৭৬-৭৭ সালে অযোধ্যা খনন কার্যে শিক্ষানবীশ মহম্মদ সহ আরও ১০ জন ছাত্র ওই কাজে ছিলেন। ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারী মাসে তারা ট্রেনিংয়ের জন্য অযোধ্যা গিয়েছিলেন। মহম্মদের থাকা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, বিবি লালের রিপোর্ট নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।
শনিবার অযোধ্যা মামলার রায় অনেকটা পুরাতত্ত্ব রিপোর্টের উপর নির্ভর করেছে। দু’দফায় বাবরি মসজিদের নীচে খনন করা হয়। প্রথম দফায় এই খনন কাজ চালিয়েছিল বিবি লালের নেতৃত্বে তিনজনের একটি দল। ওই খনন কার্যের রিপোর্ট হাতে পেয়ে বিবি লাল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকে জানিয়েছিলেন, “ম্যাডাম, আমরা বাবরি মসজিদের নীচে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পেয়েছি।” তা জানতে পেরে ইন্দিরা গাঁধী, বিবি লালকে বলেছিলেন, চুপ! এই কথা কেউ না জানতে পারে। আপনার রিপোর্ট ত্রুটিযুক্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।”
সৌজন্যে চ্যানেল হিন্দুস্তান