ইডির ভয়ে পালিয়ে গিয়েছেন হেমন্ত সোরেন। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির তল্লাশি অভিযান এবং গাড়ি বাজেয়াপ্তের পর এমনই দাবি করল বিজেপি। ঝাড়খণ্ডের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দাবি, মধ্যরাতে চটি পরে এবং চাদরে মুখ ঢেকে দিল্লির বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন হেমন্ত। শিবু সোরেনের পুত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তিও ‘নিখোঁজ’ বলে দাবি করেছে বিজেপি।
বিজেপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঝাড়খণ্ডের শাসকদল জেএমএম অবশ্য জানিয়েছে, বিজেপি হেমন্তকে ‘পলাতক’ হিসাবে দেখাতে চাইছে। হেমন্তের দলের আরও দাবি, বুধবার দুপুর ১টার আগেই ইডির তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সকালে ইডির তল্লাশি অভিযান শুরুর সময়ে হেমন্ত তাঁর দিল্লির বাড়িতেই ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় তাঁকে। জেএমএম-এর তরফে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যায় বিমানে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচীতে ফিরে আসেন তিনি। সোমবার হেমন্তের দলের তরফে একটি বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ইডির তল্লাশিতে কিছুই মেলেনি।
সোমবার এক্স হ্যান্ডলে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সভাপতি বাবুলাল মরান্ডি সংবাদমাধ্যমের সূত্রকে উদ্ধৃত করে লেখেন, “মধ্যরাতে চটি পরে এবং চাদরে মুখ ঢেকে দিল্লির বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটেই বেরিয়ে গিয়েছেন হেমন্ত।” এর পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের দাবি, ‘টালমাটাল পরিস্থিতি’তে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সেই পদে নিজের স্ত্রীকে বসাতে চাইছেন হেমন্ত। নিশিকান্ত এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “হেমন্ত জেএমএম, জোটশরিক কংগ্রেস এবং অন্যান্য দলের বিধায়কদের ব্যাগপত্র নিয়ে রাঁচীতে চলে যেতে বলেছেন। সেখানে না কি এই প্রস্তাব দেওয়া হবে যে কল্পনা সোরেন (হেমন্তের স্ত্রী)কে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে।” অবশ্য এই প্রথম নয়, আগেও এই জল্পনা ছড়িয়েছিল যে হেমন্ত নিজের স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসাতে পারেন।
সোমবার সকালে হেমন্তের দিল্লির বাড়িতে পৌঁছয় ইডির একটি দল। দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালিয়ে তাঁর বিলাসবহুল একটি বিদেশি গাড়ি এবং বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ইডি মোট ন’বার তলব করলেও প্রতি বারই তা এড়িয়ে গিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত। গত শনিবার হেমন্তকে নতুন করে সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রথমে তাঁকে ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজির হয়ে তদন্তপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যুত্তর না পেয়ে পরে তাঁকে ২৯ কিংবা ৩১ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় রাখতে বলা হয়। সেই ‘সময়সীমার’ প্রথম দিনেই এই পদক্ষেপ।
ইডির বক্তব্য, রাঁচীতে ৭.১৬ একর একটি জমির মালিকানার বিষয়ে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে কিছু প্রশ্ন করতে চায় তারা। অভিযোগ উঠেছে, ওই জমি বেআইনি ভাবে দখল করা হয়েছে। আদতে সেটা সেনার জমি ছিল। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ‘অস্পষ্ট’ বলে দাবি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জমি ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে ইতিমধ্যে ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ছবি রঞ্জন নামে এক আমলা, অমিত আগরওয়াল এবং বিষ্ণু আগরওয়াল নামে দুই ব্যবসায়ী। ওই দুই ব্যবসায়ী বিতর্কিত জমির উপর শপিং মল তৈরি করেছেন বলে খবর।