২০ দিনেও খুঁজে পাচ্ছে না তাঁর পুলিশ, তবে শাহজাহান শেখ কোথায়, জানেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল

ইডির আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ২০ দিন। এখনও অধরা সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান। এ নিয়ে ক্রমাগত চাপের মুখে পুলিশ বারবার জানিয়েছে, তৃণমূল নেতার খোঁজে তারা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি দাবি করে বসলেন, শাহজাহান নাকি রাজ্যের বাইরে রয়েছেন! চিকিৎসা করাতে রাজ্যের বাইরে গিয়েছেন তিনি। কারামন্ত্রীর এই দাবি নিয়ে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, রাজ্য প্রশাসন শাহজাহানকে আগলে রেখেছে বলে এত দিন যে অভিযোগ উঠছিল, তা-ই প্রমাণিত হয়ে গেল অখিলের মন্তব্যে।

এ বিষয়ে তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মন্ত্রী যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ তাঁর নিজের বক্তব্য হতে পারে। দল এ বিষয়ে কিছু জানে না। এ ক্ষেত্রে দলের নীতি খুব পরিষ্কার। কেউ কোনও অপরাধ করে থাকলে, দল তাঁর পাশে থাকবে না।’’

গত ৫ জানুয়ারি ইডির উপরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল সন্দেশখালিতে। এখনও পুলিশের জালে ধরা পড়েননি ইডি আধিকারিকদের উপরে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান। এর মধ্যে রাজ্যপাল থেকে হাই কোর্ট, সব পক্ষই ভর্ৎসনা করেছে জেলা পুলিশকে। ন্যাজাট থানাকে ‘অব্যাহতি দিয়ে’ আদালত তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে সিট-এর হাতে। তার পরেও কেন শাহজাহানের হদিস মিলল না, সর্বত্র সেই প্রশ্ন উঠছে। বৃহস্পতিবারও এই প্রশ্নেরই মুখে পড়েন অখিল। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শেখ শাহজাহান চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। উনি অসুস্থ ছিলেন। তবে এখন কোথাও আছেন, নিশ্চিত ভাবে পুলিশ তা খুঁজে বার করবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘অপরাধীকে ছাড়া হবে না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ প্রশাসন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি হয়তো বাইরে কোথাও আছেন। কিন্তু পুলিশ চুপচাপ বসে নেই।’’

তবে শাহজাহান রাজ্যের বাইরে কোথায় রয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি অখিল। তাঁর বক্তব্য, সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা এখন বাংলায় নেই। থাকলে পুলিশ নিশ্চিত ভাবে তাঁকে ধরে ফেলত। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘শাহজাহান আত্মসমর্পণ করবেন কি না, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। আমি এ সব জানি না। ইডির কাছে হাজিরা দিতে সমস্যা হলে সময় চেয়ে নিতে পারে। ইডি অনেককে সময় দিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সময় দিতে পারে।’’

এর আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও শাহজাহানের ‘বর্তমান ঠিকানা’ নিয়ে দাবি করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, বেড়মজুর ১ এবং ২ পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যেই কোথাও রয়েছেন শাহজাহান এবং পুলিশ তা জানে। বিরোধী দলনেতা কটাক্ষ করেছিলেন, “শাহজাহানকে পুলিশ আগলে রেখেছে। আমি জানি শাহজাহান কোথায়, আর পুলিশ জানে না? সিট তদন্ত করবে। কিন্তু দলে রাজ্য পুলিশ থাকলে শাহজাহানকে ধরতে পারবে না।” সেই সময় বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার পর্যবেক্ষক শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ও দাবি করেছিলেন, “পুলিশ এবং সরকারের মদতেই শাহজাহান সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’ সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক, সিপিএমের নিরাপদ সর্দারেরও দাবি ছিল, “শুক্রবার কোড়াকাঠি থেকে তিনটি মোটরবাইকে দাউদপুরের দিকে রওনা দেন শাহজাহান। সন্দেশখালির বিভিন্ন দ্বীপে তিনি আত্মগোপন করে রয়েছেন।” অন্য দিকে, অন্য দিকে শাহজাহান ঘনিষ্ঠেরাও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি দাবি করেছেন, তৃণমূল নেতা নিজের এলাকা ছাড়েননি। এত দিন তিনি যাঁদের উপকার করেছেন, তাঁরাই এখন তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন।

বসিরহাট জেলা পুলিশ সূত্রে অবশ্য দাবি, আদালতের নির্দেশে স্থানীয় ন্যাজাট থানার পুলিশ আর কোনও তদন্ত করছে না। ফলে স্থানীয় পুলিশকর্মীদের কাছে যে সব তথ্য রয়েছে, তা পৌঁছচ্ছে না তদন্তকারীদের কাছে। কিন্তু ঘটনার পর প্রায় ১২ দিন তো তদন্তের দায়িত্ব জেলা পুলিশের হাতে ছিল। তখন কী করছিল তারা? জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘শাহজাহানকে ধরতে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিল তারা। কিছুটা সময় লাগছিল। চেষ্টা করেও ইডি এবং সিআরপিএফের জওয়ানদের বয়ান রেকর্ড করা যায়নি। সাহায্য না পেয়ে তদন্তে সমস্যা হচ্ছিল পুলিশের। এই বিষয়টি আদালতেও জানানো হয়েছে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.