ঐতিহাসিক অযোধ্যা রায় নিয়ে তোলপাড় বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

শনিবার অযোধ্যা রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গোগোইয়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ-বিচারকের বেঞ্চ বলেছিল যে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিতর্কিত জায়গায় মন্দির নির্মাণের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে এবং তিন মাসের মধ্যে তার পরিকল্পনা পেশ করা উচিত। অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতেও আলোচনা হয়েছিল। মার্কিন মিডিয়া আদালতের এই সিদ্ধান্তকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজয় বলে অভিহিত করেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, বিজেপি এই বিষয়টি কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছে।

আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম

‘বিতর্কিত ভূমিটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলির উপর অর্পণ করা হবে’

আমেরিকান সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট লিখেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট এই বিতর্কিত স্থানটির নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে প্রদান করেছেন, যা পরবর্তীকালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর আস্থার উপর অর্পিত হবে। পত্রিকাটির বক্তব্য এই যে , “সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে রূপ দিতে কাজ করবে। কয়েক দশক ধরে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি রাজনৈতিক লাভের জন্য মামলার সাথে যুক্ত সংবেদনশীল মাধ্যমগুলি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। তবে বিজেপি সবচেয়ে কার্যকরভাবে ও ধনাত্মক ভাবে এটিকে ব্যবহার করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন মোদী সরকার সম্প্রতি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের কাছ থেকে তার স্বায়ত্তশাসন তথা ৩৭০ ধারাকে বিলুপ্ত করেছেন এবং ভারতে বসবাসরত দীর্ঘকালীন মুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করেছেন।এই বিতর্কিত স্থানটির নিয়ন্ত্রণ অর্জন হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের বহু দশকের পুরানো বিষয়। মোদি নিজেই যৌবনে রাম মন্দির আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি এই ইস্যুতে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন। “

বিজেপির লক্ষ্য মন্দির তৈরি : ওয়াশিংটন পোস্ট

আমেরিকান সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে যে এই রাম মন্দিরের সিদ্ধান্তটি কয়েক দশক পুরানো বিতর্ক, আজকের রায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বড় বিজয়। পত্রিকাটি বলেছে যে, বিজেপির মূল লক্ষ্য ছিল দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত স্থানে ভগবান রামের মন্দির তৈরি করা।

পত্রিকাটি আরও বলেছে, “ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বাধিক বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানকে দেওয়ার ট্রাস্টকে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদটি যেখানে ছিল সেখানে হিন্দু মন্দির নির্মাণের পথ সাফ করে দিয়েছেন।”

বাবরি মসজিদের ধাঁচা ভাঙার পরে হিন্দুরা মন্দিরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে: নিউইয়র্ক টাইমস

আমেরিকান সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, “সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে যেখানে মসজিদ ছিল সেখানে হিন্দুদের মন্দির তৈরি করার অনুমতি দিয়েছেন। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পরে হিন্দুরা ভগবান রামের জন্মভূমিতে তাঁর মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল বিজেপি কেবলমাত্র অযোধ্যায় হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং মন্দির নির্মাণের বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এটিই তাদের ভোট ব্যাংক গঠনের প্রধান বিষয় ছিল। “

মধ্য প্রাচ্য

বিজেপির অভিযানে জয়: আল জাজিরা

মধ্য প্রাচ্যের ওয়েবসাইট লিখেছে, “বিজেপি বহু বছর ধরে অযোধ্যার মন্দির পুনশ্চ নির্মাণের জন্য প্রচার করেছিল। এখন আদালতের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে মন্দির নির্মাণের পথ পরিষ্কার করা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর প্রথম দিনগুলিতে ৬৯ বছর বয়সী মোদীর পক্ষে একটি বড় জয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে বহু বছরের ক্ষোভ ও দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষপূর্ণ আইনি লড়াইয়ের অবসান হবে, যা ব্রিটিশ সামন্ততান্ত্রিক শাসকরা এমনকি দালাই লামাও সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। ”

মুসলমানরা বিকল্প জমি পাবেন: গাল্ফ নিউজ

অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওয়েবসাইট গাল্ফ নিউজ লিখেছে, “১৩৪ বছরের বিরোধ ৩০ মিনিটের মধ্যে সমাধান করা হয়েছে। হিন্দুরা পাবেন অযোধ্যা জমি। মুসলমানদের মসজিদের বিকল্প জমি দেওয়া হবে। “

পাকিস্তান

আদালতের রায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্কের উপর ভারী প্রভাব ফেলবে: ডন

পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘দ্য ডন’ লিখেছে, “ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দান করেছে। ১৯৯২ সালে হিন্দুরা মসজিদটি ভেঙে দিয়েছিল। সেই বিতর্কিত স্থানে হিন্দুদের পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত এবং বলেছে যে, অযোধ্যা জমিতে একটি মন্দির নির্মিত হবে।” তবে আদালত বলেছে যে ৪৬০ বছর পুরাতন বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়া আইন লঙ্ঘন ছিল। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভারতের হিন্দু ও মুসলমানদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত সরকারের উচিত মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: দ্য ট্রিবিউন

পাকিস্তানের দ্য ট্রিবিউন তার সংবাদে সরকার এবং বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য উল্লেখ করেছে। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশীর বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে যে ভারতের মুসলমানরা ইতিমধ্যে অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত তাদের উপর চাপ বাড়িয়ে দেবে। ওয়েবসাইটটি বিদেশমন্ত্রকের পক্ষে লিখেছে যে ভারত সরকারের উচিত মুসলমানদের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

ব্রিটেন

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ বিজেপির জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার অংশ: দ্য গার্ডিয়ান

ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানও এটিকে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য একটি বড় বিজয় বলে উল্লেখ করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে যে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ তাঁর জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন দেশটির দুই কোটি মুসলমান সরকারকে ভয় পাচ্ছে। পত্রিকাটি বলেছিল যে ১৯৯২ সালে মসজিদ ধ্বংস ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যর্থতার জন্য একটি বড় মুহূর্ত ছিল। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.