হাতে মাত্র সাত দিন। আগামী সোমবারই অযোধ্যায় উদ্বোধন হবে রামমন্দিরের। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই শুভ কাজের আগে আরও নানা কর্মসূচির আয়োজনও হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে সেই সকল কর্মসূচি। ১৬ থেকে শুরু করে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত কবে কোন কোন কর্মসূচি রয়েছে তার সবিস্তার তালিকা প্রকাশ করেছে ‘শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’।
সোমবার ‘শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’ নিজেদের ‘এক্স’ (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে রামমন্দির উদ্বোধনের দিন পর্যন্ত নির্ধারিত কর্মসূচির যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, আগামী ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ অর্থাৎ পৌষ মাসের শুক্ল কুর্ম দ্বাদশী, বিক্রম সম্বত ২০৮০-র অভিজিৎ মুহূর্তে মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে। তার আগে পর্যন্ত শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে বেশ কিছু আচার পালন করা হবে। ১৬ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বাদশ অধিবাস নিয়মের পালন করা হবে। এই ক’দিন যে নিয়মগুলি পালন করা হবে—
১৬ জানুয়ারি: প্রায়শ্চিত্ত এবং কর্মকুটি পুজো।
১৭ জানুয়ারি: মূর্তি পরিসর প্রবেশ পুজো।
১৮ জানুয়ারি বিকেল: তীর্থপুজো, জলযাত্রা এবং গন্ধাধিবাস।
১৯ জানুয়ারি সকাল: ঔষধাধিবাস, কেসরাধিবাস এবং ঘৃতাধিবাস।
১৯ জানুয়ারি বিকেল: ধন্যধিবাস।
২০ জানুয়ারি সকাল: শর্করাধিবাস, ফলাধিবাস।
২০ জানুয়ারি বিকেল: পুষ্পধিবাস।
২১ জানুয়ারি সকাল: মধ্যধিবাস।
২১ জানুয়ারি বিকেল: সহ্যধিবাস।
প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের পূর্বে ১২১ জন আচার্য মিলে এই সকল নিয়ম পালন করবেন। সমস্ত বিষটির দেখাশোনা করবেন জ্ঞানেশ্বর শাস্ত্রী দ্রাবিড়। তাঁকে সহায়তা করবেন কাশীর প্রধান আচার্য লক্ষ্মীকান্ত দীক্ষিত।
২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পরিচালক মোহন ভগবত, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। এই অনুষ্ঠানে ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ, ধর্ম, সম্প্রদায়, উপাসনা পদ্ধতি, ঐতিহ্যের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের আচার্যেরা, ১৫০রও বেশি বিভিন্ন মত-পন্থের সাধু-সন্ন্যাসী এবং ৫০-এরও বেশি আদিবাসী, জনজাতি শ্রেণির শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া জৈন, বুদ্ধ, শিখ সমাজের ধর্মীয় নেতা এবং হিন্দু ধর্মের নানা মতে বিশ্বাসী জনগণের ধর্মীয় প্রতিনিধিদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গর্ভগৃহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সকলে রামলালা দর্শনও করতে পারবেন ওই দিন।
‘শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’ জানিয়েছে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে অযোধ্যায় বহু উপহার গিয়েছে। ‘রামজন্মভূমি’তে প্রচুর উপহার পৌঁছছে সীতার ‘জন্মভূমি’ থেকেও। জনশ্রুতি, সীতার জন্মভূমি মিথিলা এখন নেপালের তরাই এলাকার জনকপুর। নেপালে ‘সীতার জন্মভূমি’ জনকপুর থেকে ইতিমধ্যেই তিন হাজারেরও বেশি উপহার এসেছে অযোধ্যায় বলে ট্রাস্টের দাবি। তার মধ্যে রয়েছে সোনার গয়না, সোনার থালা, বাটি-সহ আরও অনেক কিছু।
রামমন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে সেজে উঠেছে রামের জন্মভূমি অযোধ্যা। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছেছে আমন্ত্রণপত্র। রামমন্দির উদ্বোধনের আগে ১১ দিনের জন্য ‘ব্রতপালন’ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত বিধি অনুসারে এবং সাধুসন্তদের উপদেশ মেনে এই ১১ দিন তিনি কঠোর অনুশাসন মেনে চলবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনে কোনও খামতি যাতে না থাকে সে দিকে নজর রাখছেন আদিত্যনাথ। রামলালার নিরাপত্তার দায়িত্বে বিশেষ বাহিনীও গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড’ (এনএসজি)-এর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বাছাই করা ২০০ অফিসার এবং কর্মীকে। আগামী ২২ জানুয়ারি রামলালার মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগেই রামমন্দিরের দায়িত্ব নেবে ওই বাহিনী।