মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে শুরু সবং-পটাশপুরে অনুষ্ঠিত সাত দিনের তুলসী চারার মেলা। ৫০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই মেলা। শুধু তাই নয়, তুলসী চারার মেলা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও প্রাচীন মেলা। পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে নদীবক্ষে রয়েছে তুলসী মন্দির। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে তুলসী চারার মেলা শুরু হয়। এই তুলসী মন্দিরকে কেন্দ্র করেই এই মেলার নামকরণ-তুলসী চারার মেলা।
পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে বাকসিদ্ধ বৈষ্ণব শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী বৈষ্ণবচার্যরূপের সমাধি মন্দির রয়েছে। বয়স্কদের কথায়, গোকুলানন্দ সবং-এর কোলন্দা গ্রামের নামকরা জমিদার পরমানন্দ ভুঁইঞার ভান্ডারি ছিলেন। বেশিরভাগ সময়ই সাধন ভজনে ব্যস্ত থাকতেন। পরমানন্দের ছেলে বিপ্রপ্রসাদ গোকুলানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
কথিত আছে, গোকুলানন্দ গোস্বামী পৌষ সংক্রান্তিতে রাত ১২ টা নাগাদ নদীর মাঝখানে, তাঁর যোগমঞ্চে সাধনা করতে করতে সমাধিপ্রাপ্ত হন। দেহরক্ষার আগে গোকুলানন্দ গোস্বামী তাঁর শিষ্য বিপ্রপ্রসাদকে ডেকে বলে যান পৌষ সংক্রান্তিতে তুলসীমঞ্চে তিনমুঠো মাটি দিলে সবার মনস্কামনা পূরণ হবে। এরপর থেকেই পৌষ সংক্রান্তির ভোরে পুণ্যস্নান করে গোকুলানন্দ গোস্বামীর তুলসী মঞ্চে কেলেঘাই নদী থেকে তিন মুঠো মাটি তুলে দান করেন।
দুই মেদিনীপুর জেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জেলার হাজার হাজার মানুষ তুলসী মঞ্চের উচুঁতে মাটি দিয়ে পূজা নিবেদন করেন।
সম্প্রতি,কেলেঘাই নদীর বাঁধের সংস্কার হয়েছে। এর ফলে মেলার আয়তনও বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১২ বিঘা জায়গা জুড়ে মেলা বসে। অতীতে বিভিন্ন কারণে এক দিনের জন্য মেলা বসত। বর্তমানে মেলা চলে ছয় দিন।
তুলসী চারার মেলার আর একটি বিশেষত্ব হল তুলো। দীর্ঘদিন ধরেই থেকেই এই মেলায় পসরা সাজিয়ে আসছেন তুলো ব্যবসায়ীরা। নানা ধরনের তুলো কেনাবেচা হয় এই মেলাতে।
এছাড়াও এই মেলায় পাওয়া যায় ভাবসংগীত ও লোকসংগীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। সময়ের সঙ্গে আকারে ও বহরে বেড়েছে তুলসীচারার মেলা। একে একে মেলায় যোগ হয়েছে মাটির সামগ্রী হাঁড়ি, কলসি, শিলনোড়া, ঝাঁটা, কুলো, সবজি, মাছ ও সবং-পটাশপুরের পরিচিত মাদুর এবং বাগমারির শঙ্খ সহ বিভিন্ন মিষ্টির পসরা।