লাফদড়ি গলায় পেঁচিয়ে ৩ জনকে খুন! গোপন তথ্য লোপাট করতে পুকুরে ফেলা হল মোবাইল, সিম কার্ড। প্রমাণ লোপাটে ফেলা হল লাফদড়িও। পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার খুনে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত নভেম্বরের ১০ তারিখে কাঁকসার পানাগড় রেলপাড়ের সারদা পল্লিতে একই বাড়িতে তিনজন খুন হন। খুন হন সিমরন বিশ্বকর্মা ও তার দিদিমা সীতা দেবী এবং মামার ছেলে সোনু বিশ্বকর্মা। তদন্তের ভিত্তিতে খুনের ঘটনায় প্রথম গ্রেফতার হয় সিমরনের কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বকর্মা। তারপরই গ্রেফতার হয় আরও ২ যুবক মহম্মদ জুনেদ এবং পাশের বাড়ির প্রসেনজিৎ বিশ্বকর্মা।
পুলিস সূত্রে খবর, তাঁদের জেরা করে পুলিসি তদন্তে উঠে আসে কাকিমার বিবাহ বহির্ভূত একাধিক সম্পর্কের কথা সিমরন জেনে যাওয়ায় এবং আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করে দেওয়াতেই সিমরনের উপর ক্ষোভের জন্ম নেয় কাকিমার। সিমরনের বাবা এবং মা আসামে গিয়েছিলেন বড় মেয়ের কাছে । সেই সময় ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মা বাড়িতে তাঁর যুবতী মেয়ে সিমরনের কাছে রেখে যান সিমরনের দিদিমা সীতা দেবী এবং মামার ছেলে সোনু বিশ্বকর্মাকে। সেই সুযোগে গত ১০ নভেম্বর কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বকর্মা ও প্রসেনজিৎ বিশ্বকর্মা সিমরনকে খুন করার পরিকল্পনা করে। এই প্রসেনজিত বিশ্বকর্মার সঙ্গে কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বকর্মার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রে জড়িত রিঙ্কির আর এক ‘প্রেমিক’ রাজবাঁধের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার ঠিকাকর্মী মহম্মদ জুনেদ ওরফে পাপ্পুও।
ঘটনার দিন রিংকি বিশ্বকর্মা ও পাশের বাড়ির প্রসেনজিৎ বিশ্বকর্মা সিমরনের বাড়িতে যায়। সিমরনের একটি লাফদড়ি ছিল। প্রসেনজিৎ বিশ্বকর্মা ঘরে ঢুকে সিমরনের গলায় সেই লাফদড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে। প্রসেনজিৎ-ই লাফদড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে দিদিমা সীতা দেবীকেও খুন করে। সিমরনদের বাড়িতে থাকা দুটি কুকুরকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিল সিমরনের মামার ছেলে সোনু বিশ্বকর্মা। এরপর সে বাড়ি ফিরতেই, মামার ছেলে সোনু বিশ্বকর্মাকেও একইভাবে শ্বাসরোধ করে খুন করে প্রসেনজিত্। ততক্ষণ বাইরে পাহারা দিচ্ছিল কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বকর্মা। প্রসেনজিৎ ও মহম্মদ জুনেদ ওরফে পাপ্পুর সঙ্গে কাকিমার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ছবি এবং ভিডিয়ো ছিল সিমরনের মোবাইলে। তাই খুনের পরই সিমরনের মোবাইল, সিম কার্ড ও খুনের ‘হাতিয়ার’ লাফদড়িটি পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
এরপরই গল্প সাজানো হয়। গল্প সাজায় কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বশর্মা। হেলমেট পড়ে এক যুবক ওই বাড়িতে ঢুকে খুন করার গল্প সাজায় কাকিমা। কিন্তু তাহলে বাড়িতে থাকা দুটি বিদেশি কুকুর কেন চুপ ছিল? তদন্তকারীদের মনে প্রশ্ন জাগে। এরপরই জেরায় পর্দাফাঁস হয় আসল ঘটনার। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের এসিপি কাঁকসা সুমন কুমার জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ধৃতদের নিয়ে এদিন খুনের পুনর্নির্মাণ করা হয়। পুকুরের জল পাম্পের মাধ্যমে তুলে ফেলা হচ্ছে। এরপরই মোবাইল, সিম কার্ড এবং লাফদড়ির সন্ধানে তল্লাশি চালানো হবে। এই খুনের পিছনে আরও কোনও কারণ রয়েছে কি না, ধৃতদের জেরা করে তা জানারও চেষ্টা চলছে। ওদিকে নিহত সিমরনের বাবা ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মা এই নৃশংস খুনের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।