সন্দেশখালিকাণ্ডে মাথা ফেটে গুরুতর জখম হওয়া ইডি আধিকারিক রাজকুমার রামের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে? সেই অভিযোগের তদন্তও করছে আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই? একটি এফআইআরের প্রতিলিপিকে কেন্দ্র করে তেমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে রাজকুমার রাম নামে এক ইডি আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সেই ইডিকর্তা এবং সন্দেশখালির রাজকুমারের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে মিল থাকলেও, দু’জনেই একই ব্যক্তি কি না, তা অবশ্য পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি।
শুক্রবার রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হন রাজকুমার। ইডি সূত্রে জানা যায়, তিনি সংস্থার সহ-অধিকর্তা পদে রয়েছেন। সন্দেশখালির ঘটনার পর তাঁকে জখম অবস্থায় সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন। তল্লাশি অভিযানে গিয়ে ইডির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সেই সূত্রে প্রচারের আলোয় এসে পড়েছেন রাজকুমারও। ঘটনাচক্রে, সেই আবহেই ওই এফআইআরের প্রতিলিপি আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে।
এফআইআরে দেখা যাচ্ছে, রাজকুমার নামে এক ইডিকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও আয়বহির্ভূত সম্পতির মালিকানা সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ও ১২০-বি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৩(২) ও ১৩(১)(বি) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযোগ, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে রাজকুমারের সম্পত্তির বহর। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে রাজকুমারের ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল। ২০২০ সালের মার্চের ৩১ তারিখে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী চন্দ্রমা কুমারীর নামে থাকা সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে হয় ৫৭ লক্ষ টাকা। এ দিকে, এই সময়ের মধ্যে রাজকুমারের আয় হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। বাড়তি ওই ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার উৎস কী, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েই।
এফআইআরে লেখা, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে ইডির অফিসার পদে এসেছিলেন রাজকুমার। ২০১৮ সালে পদোন্নতি হয়ে সহ-অধিকর্তা হন তিনি। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর দফতরে কর্মরত ছিলেন রাজকুমার। যে সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়, সেই সময় গুয়াহাটির দফতরে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, বেঙ্গালুরুতে কর্মরত থাকাকালীনই তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, তা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। ঘটনাচক্রে, সন্দেশখালিতে আক্রান্ত হওয়া রাজকুমারও এক সময়ে বেঙ্গালুরু ও গুয়াহাটির ইডি দফতরে কর্মরত ছিলেন। যার জেরেই দু’জনেই একই ব্যক্তি বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও এ ব্যাপারে কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি।
তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে শাসক তৃণমূল। তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের একাংশের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অতীতেও সে সব প্রকাশ্যে এসেছে। বিষয়টা হল, ডাকাতকে দিয়েছে অপরাধের তদন্তের ভার। তাতে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে!’’