রাজ্যের ৬০টি সংশোধনাগারে থাকতে পারেন সর্বসাকুল্যে ২১ হাজারের কিছু বেশি বন্দি। কিন্তু রয়েছেন প্রায় ২৮ হাজার। এই তথ্য জানা গিয়েছে ২০২৩-এ রাজ্যের সংশোধনাগার সম্পর্কিত এনসিআরবি-র রিপোর্টে।
গত ১ মে রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে থাকা বন্দিদের সংখ্যার ভিত্তিতে তৈরি ওই রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের সাতটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মধ্যে চারটিতে অতিরিক্ত বন্দি রয়েছেন। এই অবস্থায় মুক্ত সংশোধনাগারগুলিতে আবাসিক বাড়াতে চাইছেন কারা কর্তৃপক্ষ। তাতে পরিস্থিতি খুব বেশি বদল না হলেও, ভিড় কিছুটা কমবে বলেই মনে করছেন আধিকারিকেরা।
কী এই মুক্ত সংশোধনাগার? কারা দফতর সূত্রের খবর, এখানে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্দি তথা আবাসিকেরা থাকেন একটি ভবনে। সকাল ৬টায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় ঘেরাটোপের বাইরে। এই সময় কেউ কোনও পেশায় যুক্ত হতে পারেন, কেউ বাড়িও যেতে পারেন। তবে একটি নির্দিষ্ট কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে থাকারই নিয়ম এবং রাত ৮টায় তাঁদের আবার ফিরে আসার কথা ভবনে।
নিয়ম অনুযায়ী, মুক্ত সংশোধনাগারে প্রথম তিন মাস তাঁদের খাবার দেন কারা কর্তৃপক্ষ। তার পরে খাবার নিজেদের জোগাড় করতে হয়। মূলত কারাদণ্ডের সাজা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন বন্দিদেরই মুক্ত সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে বন্দিদের নির্বাচন করতে হয় পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে। কারা মুক্ত সংশোধনাগারে যাবেন, তা ঠিক করে একটি বোর্ড।
কারা দফতরের সিদ্ধান্ত, এখন ২০০ জন বন্দিকে রায়গঞ্জ, লালগোলা, মেদিনীপুর ও দুর্গাপুর মুক্ত সংশোধনাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আগে বন্দি স্থানান্তর সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার লক্ষ্যে বিভিন্ন জ়োন-এ বোর্ড গঠিত হয়েছিল। সেই সব বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে এই ২০০ জন বন্দিকে মুক্ত সংশোধনাগারে পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কারা দফতর। গত মাসের শেষ দিকে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি হয়। তার পরেই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে যেখানে অতিরিক্ত বন্দির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার, সেখানে মাত্র ২০০ জনকে স্থানান্তর করে সমস্যার কতটা সুরাহা হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, জামিন পাওয়ার পরেও বন্ড-এর টাকা জমা দিতে না পারায় যাঁরা জেলে আটকে রয়েছেন, তাঁদের মুক্ত করতেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সব রাজ্যের কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভিডিয়ো কনফারেন্স হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত সংশোধনাগারের সুপারদের সংশ্লিষ্ট তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যাঁদের বাড়ির লোকজন ফিরিয়ে নিয়ে যাননি, তাঁদের একাংশকে রাখার জন্য বারাসতে একটি হোম তৈরি হয়েছে।
এনসিআরবি-র ওই রিপোর্ট বলছে, গত ১ মে রাজ্যের ৬০টি সংশোধনাগারে মোট বন্দির সংখ্যা ছিল ২৮,০৬৮। তাঁদের মধ্যে বিচারাধীন বন্দি ২২,৮৯৫ জন। ছিলেন ৪৬০১ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। কিন্তু সব মিলিয়ে ওই সংশোধনাগারগুলিতে থাকার কথা ২১,৪৭৬ জনের। কারা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আরও সংশোধনাগার প্রয়োজন। কিন্তু তহবিল নেই। মালদহের একটি সংশোধনাগার নির্মাণের কথা আছে।’’
ওই রিপোর্ট আরও বলছে, বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই রয়েছেন অতিরিক্ত বন্দি। যেমন, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকতে পারেন ৩৬০৭ জন। গত ১ মে সেখানে ছিলেন ৩,৬৯১ জন। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকার কথা ১২৮৪ জনের। কিন্তু ওই দিন সেখানে ছিলেন ১৫৯৪ জন। জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ ৮৬৭ জন। অথচ, সেখানে ছিলেন ১৫২৫ জন। গত ১ মে অতিরিক্ত বন্দি ছিলেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও। তবে বহরমপুর, প্রেসিডেন্সি ও বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে অতিরিক্ত বন্দি ওই দিন ছিলেন না।
ওই রিপোর্ট অনুয়ায়ী লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগারে থাকতে পারেন ২৮৬ জন। সেখানে ১ মে ছিলেন ১১১ জন। তেমনই ওই দিন দুর্গাপুর মুক্ত সংশোধনাগারে ছিলেন ৫০ জন আবাসিক। সেখানে থাকতে পারেন ১০৭ জন। রায়গঞ্জ ও মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারে থাকতে পারেন যথাক্রমে ২৮ এবং ৬২ জন। ওই দিন ছিলেন যথাক্রমে ১৮ এবং ৩৭ জন।
মুক্ত সংশোধনাগারে বন্দি স্থানান্তর যে সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়, তা বিলক্ষণ জানেন কারাকর্তারা। তাঁদের এক জনের মন্তব্য, ‘‘একটি সুসংহত নীতি প্রয়োজন। রাজ্য ও কেন্দ্র,
দুই সরকারেরই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত।’’