মন্ত্রী অরূপের সামনেই মন্ত্রী মনোজ টেনে সরিয়ে দিলেন পুর প্রশাসককে, বিতণ্ডা, হাওড়া কার্নিভ্যালে ধুন্ধুমার!

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দলীয় কোন্দল’ সরিয়ে হাওড়ার ডুমুরজলায় দ্রুত ‘ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল’ চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ‘স্থানীয় স্তরে ঝগড়া’ নিয়েও তিনি বৃহস্পতিবার কড়া বার্তা দিয়েছেন দলীয় কর্মীদের। কিন্তু তার পরেও ডুমুরজলায় ‘দলীয় কোন্দল’ প্রকাশ্যে এল আবার। মন্ত্রী অরূপের সামনেই হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তীকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠল রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এর পরেই বৈঠকে বসেন অরূপ, মনোজ এবং সুজয়। বৈঠক শেষে অরূপ বলেন, ‘‘সব পরিবারেই সমস্যা থাকে। মিটে গিয়েছে। এই প্রথম এখানে কার্নিভ্যাল হচ্ছে। ছোট জায়গা। ঢোকার সময় পায়ে পা লেগে লেগে গিয়েছিল। কোনও ধাক্কাধাক্কি হয়নি।’’ একই কথা জানিয়েছেন মনোজ এবং সুজয়ও। মনোজ আবার গানও শুনিয়েছেন— অনুপম রায়ের ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই বৃহস্পতিবার ডুমুরজলায় এসেছিলেন অরূপ। তিনি কার্নিভ্যালে ঢোকার সময়েই দেখা যায়, অরূপের উপস্থিতিতে সুজয়কে ধাক্কাধাকি করছেন কয়েক জন। সুজয়কে টেনে সরিয়ে দেন মন্ত্রী মনোজও, এমন ছবিও দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে। এর পরেই আঙুল ওঠে হাওড়ায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের দিকে। বৈঠক শেষে যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেন অরূপ। তাঁর কথায়, ‘‘মনোজ, সুজয় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করুক। প্রত্যেক পরিবারেই সমস্যা থাকে। বসে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। মেলা নবীন-প্রবীণের মিলনক্ষেত্র।’’ তিনি এও জানান, ডুমুরজলায় কার্নিভ্যাল চলবে। আরও একদিন সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই কার্নিভ্যাল। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত, সেই পার্কিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনও টাকা লাগবে না পার্কিংয়ের জন্য। পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ।’’

হাওড়া পুরসভার উদ্যোগে ডুমুরজলায় ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল শুরু হয়। ২২ ডিসেম্বর কার্নিভ্যালের উদ্বোধন করেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ১২ দিন ধরে চলার কথা ছিল এই কার্নিভ্যাল। কিন্তু ‘ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল’ শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় বুধবার সন্ধ্যায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মনোজের ঘনিষ্ঠ একাংশের আপত্তিতেই কার্নিভ্যাল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেই অভিযোগ করে পুরসভা। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কয়েক জনের জন্য কার্নিভ্যাল বন্ধ হতে পারে না। যাঁরা গন্ডগোল করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি কড়া বার্তাও দেন যে, এই ধরনের কাজ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কার্নিভ্যাল কমিটিকে বলেছি, আজই কার্নিভ্যাল চালু করতে। পার্কিং নিয়ে সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানানো দরকার ছিল। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বলেছি এসে কথা বলতে। দু’জনকে এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে।” এর পরেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ডুমুরজলায় আসেন অরূপ।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কার্নিভ্যাল নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত পার্কিং নিয়ে। তার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বুধবার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় কার্নিভ্যাল। মনোজের ঘনিষ্ঠ একাংশের আপত্তিতেই কার্নিভ্যাল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে হাওড়া পুরসভা। তাদের দাবি, মন্ত্রীর অনুগামীরা জটলা পাকিয়ে গন্ডগোলের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। যার জেরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পাল্টা মনোজ দাবি করেন, বেআইনি ভাবে পার্কিং থেকে টাকা তোলা হচ্ছিল বলেই তিনি কার্নিভ্যালে গিয়েছিলেন। বেআইনি পার্কিং নিয়ে তাঁর আপত্তি ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.