মুর্শিদাবাদে ট্রেন দুর্ঘটনার জের, বাতিল উত্তরবঙ্গগামী একাধিক ট্রেন, পরিষেবা কখন স্বাভাবিক হবে?

ফরাক্কায় ট্রেন দুর্ঘটনার জের। সোমবার উত্তরবঙ্গমুখী একাধিক ট্রেন বাতিল করা হল। রেল আধিকারিকেরা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও, ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হতে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভোররাত থেকে টানা কাজ করে সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে ডাউন লাইন। যে কোনও মুহূর্তে ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে আপ লাইনে কত ক্ষণে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি রেল কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৬০ জনের একটি উদ্ধারকারী দল টানা কাজ করলেও, গোটা বিষয়টি স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতে পারে বলে রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি। এ দিকে দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করা হয়েছে একাধিক টেন। বাতিল হয়েছে ইন্টারসিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সারা দিনে বাতিল হতে পারে আরও বেশ কিছু ট্রেন।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত রাধিকাপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীদের উদ্ধার করতে ইতিমধ্যেই মালদা স্টেশন থেকে বিশেষ ‘রিলিফ ট্রেন’ রওনা দিয়েছে বলে রেল সূত্রের খবর। হাওড়া থেকে রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন। যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে রিকভারি ইঞ্জিন, স্পেশাল ক্রেন, অত্যাধুনিক গ্যাস কাটার। ভোরের দিকে আলো কম থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। তবে ট্রেনে আটকে থাকা সব যাত্রীদেরই নিরাপদে বার করা গিয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি। আহত ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও দু’জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রেলের বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সোমবার সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি হতে পারে।

এই দুর্ঘটনার ফলে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে রেল যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। আগুন লেগে যাওয়া ইঞ্জিনটিকে অন্য একটি ইঞ্জিন দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিকেও সামনের লুপ লাইনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া লরিটিকেও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মেরামত করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত লাইনটিকেও।

রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কলকাতা থেকে রাধিকাপুরগামী এক্সপ্রেস। আপৎকালীন ব্রেক কষার পরেও রেললাইনে দাঁড়িয়ে যাওয়া লরির সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে পারেননি ওই এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক। রবিবার এই ঘটনার পর থেকেই ওই রুটে আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকেই তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করে রেল। তার পর ডাউন লাইনকে ট্রেন চলাচলের জন্য তৈরি করে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলের এক আধিকারিক।

সংঘর্ষ এবং হঠাৎ ব্রেক কষার কারণে ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন লেগে যায়। ইঞ্জিনের চাকাও লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন রেল দফতরের একাধিক আধিকারিক। রেল পুলিশ এবং ফরাক্কা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীও ঘটনাস্থলে আসে। ট্রেনের ধাক্কায় লরিটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেখানকার রেললাইনের একটি অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্ঘটনার জেরে বেশ কিছু ক্ষণ ওই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। মুর্শিদাবাদে উত্তরবঙ্গগামী রেল লাইনে বার বার মালবাহী লরি চলে আসায় রেলের যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও রেল কর্তাদের দাবি, দুর্ঘটনা এড়াতে যথাসম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কেন এই দুর্ঘটনা? প্রাথমিক তদন্তের পর পূর্ব রেলের অনুসন্ধান কমিটির দাবি, লরি চালকের ভুলের কারণেই এই দুর্ঘটনা! যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার নিকটবর্তী লেভেল ক্রসিং ঠিক সময়েই বন্ধ হয়েছিল দাবি রেল কর্তৃপক্ষের। দুর্ঘটনাস্থলের উপরে যে ফ্লাইওভার রয়েছে, সেখান থেকে ভুল পথে নেমে এসেছিল লরিটি। রেলকর্তারা মনে করছেন, রেললাইনে এসে যাওয়ার পরও যদি লরিচালক কোনও আলো দেখাতেন, তা হলে ট্রেনের চালক সতর্ক হতে পারতেন। কিন্তু চালক সে রকম কিছু না করায় আপৎকালীন ব্রেক ব্যবহার করেও দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়নি। যদিও ট্রেনচালকের তৎপরতায় বড় ক্ষয়ক্ষতি আটকানো গিয়েছে বলে দাবি রেলের আধিকারিকদের।

এই দুর্ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে রেল। লরিটির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যেই রেলের আধিকারিকদের হাতে এসেছে। তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশকে সেই সব তথ্য দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন মালদার ডিআরএম। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনা নিয়ে রেলের তরফেও তদন্ত করা হবে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রও জানিয়েছেন যে, এই দুর্ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন তাঁরা। কী ভাবে রেললাইনে লরিটি উঠে এল, কার ভুলে এই দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনা নিয়ে মালদার ডিআরএম বিকাশ চৌবে বলেন, “লরি রেললাইনে উঠে যাওয়াতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে লরি আসেনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ফ্লাইওভারের উপর থেকে লরিটি নেমে এলেও কোনও ভাবে তা উল্টে যায়নি। সোজা হয়েই রেললাইনের উপর লরি দাঁড়িয়ে ছিল। তবে লরিচালক যদি কোনও আলো দেখাতেন, সে ক্ষেত্রে ট্রেনের চালক দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন।” ওই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গে ডিআরএম বলেছেন, “ট্রেনে আর কোনও যাত্রী নেই। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ করছি। ডাউন লাইন তৈরি করে ফেলা হয়েছে। সেখান দিয়ে এখন ট্রেন যেতে পারবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.