মোদিময় গোবলয়! জনতার রায়ে উৎফুল্ল নমোর হুঙ্কার, ‘তেলেঙ্গানা পর্যন্ত যেন আওয়াজ যায়’

ফের ব্র্যান্ড মোদি! ফের গেরুয়া ঝড়! ফের নমো ম্যাজিকেই বাজিমাত! রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের ভোট বৈতরণী পার হয়ে রীতিমতো ফুটছে গেরুয়া শিবির। তেলেঙ্গানা সান্ত্বনা দিলেও লোকসভার ‘সেমিফাইনালে’ বিজেপির এহেন পারফরম্যান্সে বিরোধীদের কপালে আরও গভীর হয়েছে চিন্তার ভাঁজ। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির বিজেপি কার্যালয় থেকে জনতা জনার্দনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হাজার কণ্ঠের অভিবাদনের মাঝেই হুঙ্কার দিলেন, “তেলেঙ্গানা পর্যন্ত যেন আওয়াজ যায়”।

রবিবার ফল প্রায় স্পষ্ট হতেই বিজেপির সদর দপ্তরে আসেন মোদি। পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা-সহ অনেকেই। তার আগে দিল্লিতে বিজেপি দপ্তরের সামনে গেরুয়া কর্মী এবং সমর্থকেরা ভিড় জমান। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে চান তাঁরা। এদিন দিল্লি থেকে তিন রাজ্যের মানুষকে অভিনন্দন জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দলীয় কর্মীদেরও অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। মোদি বলেন, “ভারত মাতা কি জয়। আওয়াজ যেন তেলেঙ্গানা পর্যন্ত যায়।” কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, “তেলেঙ্গানা পর্যন্ত যেন আওয়াজ যায়। আজ সততার জয়। আজ জনতার জয়। আত্মনির্ভর ভারতের জয়। সুশাসনের জয়। আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্পের জয়।”   

তার পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আজ দেশের আদিবাসী সমাজ মনের কথা বলতে পারছে। এই আদিবাসী সমাজ কংগ্রেসের ৬০ বছরের রাজত্বে পিছিয়ে ছিল। গুজরাটেও আমরা দেখেছি আদিবাসীদের পাত্তা দিত না। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে এরাই কংগ্রেসকে মুছে ফেলেছে। আমি সমস্ত দলীয় কর্মীদের ধন্যবাদ জানাই। আপনারা ডাবল ইঞ্জিন সরকারের বার্তা সামুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এই জয় নারীশক্তির। দেশের মহিলাদের মনে বিজেপি। এই জয়ে আমার দায়িত্ব আরও বাড়ল। দেশের সব মা বোনেদের বলতে চাই, বিজেপি কথা রাখবে।”

এদিন, কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন নাড্ডা। বিজেপির আক্রমণের অভিমূখ স্পষ্ট করে তাঁর কটাক্ষ, “কংগ্রেসের নেতারা এমন কদর্য ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন যা জনসমক্ষে বলা যায় না। আজ এটা স্পষ্ট, ভারতে স্রেফ মোদি গ্যারান্টি আছে। আমি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের জনতাকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। দলের কর্মীরা দিনরাত কাজ করেছেন। ময়দানে নেমে দলকে জিতিয়েছেন।” 

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ের বিধানসভা ভোটে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। তেলেঙ্গানা দখল করলেও গোবলয়ে সেভাবে দাগই কাটতে পারল না হাত শিবির। অথচ এই চার রাজ্য থেকেই ভালো ফলের প্রত্যাশা করেছিলেন সোনিয়া-রাহুলরা। অন্তত ৩ রাজ্যে সরকার গড়ব, শুরু থেকেই বলে আসছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তবে রবিবার ফলফল প্রকাশ্যে আসতেই সে গুড়ে বালি! দেখা গেল দিব্বি তরতরিয়ে এগিয়ে গিয়েছে গেরুয়া তরী।

বলে রাখা ভালো, অধুনা ভারতীয় রাজনীতিতে একটি প্রবাদ তৈরি হয়েছে, ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়।’ ৩ রাজ্যের ফলাফলে সেই প্রবাদ আরও একবার ফলে গেল। গোবলয়ের তিন রাজ্যে যথেষ্ট কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। এই তিন রাজ্যেই বিজেপি মুখ হিসাবে এগিয়ে দিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীকে। কংগ্রেস যেখানে স্থানীয় নেতৃত্বকে সামনে রেখে ভোটে নেমেছে, সেখানে বিজেপি স্থানীয় নেতাদের সেভাবে গুরুত্বই দেয়নি। পুরো প্রচার অভিযানই চলেছে মোদিকে কেন্দ্র করে। গেরুয়া শিবিরের প্রত্যাশা ছিল, স্থানীয় নেতাদের প্রতি যাবতীয় যা অসন্তোষ সব উড়ে যাবে মোদি আসরে নামলে। হলও সেটাই। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, সাংগঠনিক দুর্বলতা সব ঢেকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া গোবলয়ে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে কংগ্রেস যে বারবার অসহায় হয়ে যায়, সেটা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.