আচমকা একটি চলন্ত বাসের সামনে চলে এল বুনো হাতি। সেসময় হাতির সঙ্গে দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তা থেকে বাসটিকে নীচে নামিয়ে দিলেন বাসচালক। আজ, রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে গরুমারা ও লাটাগুড়ি জঙ্গলের মাঝ দিয়ে যাওয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের মহাকালধাম-সংলগ্ন এলাকায়।
জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো এদিন সকালে চালসা থেকে একটি বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস ময়নাগুড়ির দিকে যাচ্ছিল। তখন মহাকাল ধাম-সংলগ্ন এলাকায় আচমকা একটি বুনো হাতি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তার উপর চলে আসে। কিন্তু রাস্তায় বাঁক থাকার কারণে চালক দূর থেকে হাতিটিকে দেখতে পাননি। হঠাৎ হাতিটিকে দেখা পাওয়া মাত্র চালক বাসটিকে ডানদিকে রাস্তা থেকে নীচে নামিয়ে দেন। এরপর হাতিটি ফের জঙ্গলে ঢুকে পড়লে বাসটি যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তবে যেভাবে হাতিটি চলন্ত বাসের সামনে চলে এসেছিল তাতে বড়োসড়ো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। বন দফতরের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা যায়।
প্রসঙ্গত, হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। মৃত মহিলার নাম নূরজাহান বেগম। তাঁর বাড়ি মালবাজার মহকুমার মেটেলি ব্লকের বামনি বনবস্তিতে। জানা গিয়েছে, গতকাল শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ ওই মহিলা জ্বালানি সংগ্রহের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে লাটাগুড়ি জঙ্গলের বড়দিঘি বিটের এসএসফোর কম্পার্টমেন্টে গিয়েছিলেন। বিকেল নাগাদ একটি জংলি হাতি তাঁকে আক্রমণ করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার খবর পেয়ে রাতে বন দফতরের কর্মী এবং মেটেলি থানার পুলিস ঘটনাস্থলে যান। পুলিস দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। দেহ রবিবার ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
অন্য দিকে, গতকাল শনিবার রাতে মালবাজার মহকুমার চালসার উত্তর ধুপঝোরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াল একটি দাঁতাল। রাতের বেলায় ধানজমিতে ঢুকে প্রচুর ধান খায় হাতিটি। এরপর স্থানীয় মানুষজনের চিৎকার-চ্যাঁচামেচিতে হাতিটি জঙ্গলে ফেরে। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন এই ভাবে গরুমারা জঙ্গল থেকে হাতি এসে ধানজমিতে ঢুকে ধান খেয়ে জমি নষ্ট করে চলে যায়। ঘোর চিন্তিত কৃষকেরা।
কিছুদিন আগে খাবারের লোভে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের মিড ডে মিলের রান্নাঘরে হানা দিয়েছিল বুনো হাতি। মালবাজার মহকুমার মেটেলি ব্লকের ডাঙ্গি ডিভিশন চা-বাগানের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ঘটনা। ঘটনায় সমগ্র এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তখন। রাত প্রায় দুটো নাগাদ সংলগ্ন খারিয়ার বান্দার জঙ্গল থেকে একটি হাতি বের হয়ে এসেছিল ওই এলাকায়। হাতিটি এলাকার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের রান্নাঘরের দেওয়াল ভেঙে দেয়। রান্নাঘরে কোনও খাবার মজুত না থাকায় সে অবশ্য কোনও কিছু খেতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের চিৎকারে হাতিটি জঙ্গলে চলে গিয়েছিল।
এর আগেও ওই রান্নাঘরে হাতি তাণ্ডব চালিয়েছিল। পরে ব্লক প্রশাসনের তরফে সেই রান্নাঘর মেরামত করে দেওয়া হয়। এলাকায় হাতির হানা রুখতে রাত্রে বনকর্মীদের টহলদারি দাবি করেন বাসিন্দারা। বন দফতরের তরফে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
হাতিকে ঘিরে ইদানীং গোটা এলাকাই সন্ত্রস্ত থাকছে এখানে। কয়েকদিন আগেও দেখা গেল, সেদিন সকাল থেকে একটি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছিল মাল ব্লকের ডামডিম গ্রাম পঞ্চায়েতের বেতবাড়ি ডিভিশন চা-বাগান এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বনকর্মীরা। হাতিটিকে তারঘেরা জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। হাতির ভয়ে চা-বাগানে কাজ করতে ভয় পাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা।