‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যে অভিনয় থেকে সাময়িকীর সম্পাদনা, মঞ্চ মাতাচ্ছেন স্বামী খুনে যাবজ্জীবন পাওয়া মনুয়া

মনুয়া মজুমদারকে মনে আছে? বছর ছয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তিনি। ২০২১ সাল থেকে তাঁর ঠিকানা বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। আর সেখানেই মনুয়ার বহুমুখী প্রতিভার স্ফূরণ ঘটেছে। এক হাতে সামলেছেন সংশোধনাগার থেকে প্রকাশিত সাময়িকী। অন্য দিকে, ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যে তাঁর নাচ মুগ্ধ করেছে বর্ধমানবাসীকে। জেল সুপার থেকে নাচের প্রশিক্ষক, সকলেই অবাক মনুয়ার ‘পারফরম্যান্স’ দেখে।

২০১৭ সাল। অশোকনগরে নিজের স্বামীকে খুনে গ্রেফতার করা হয়েছিল মনুয়াকে। ২০১৯ সালে তাঁকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনায় বারাসত আদালত। তার পর থেকে তাঁর ঠিকানা রাজ্যের একাধিক সংশোধনাগার। ২০২১ সালে মনুয়াকে আনা হয় বর্ধমানের জেলে। শুক্রবার সেই মনুয়ার নৃত্যশৈলী দেখে বাহবা দিচ্ছে গোটা বর্ধমান। কখনও ‘আগুনের পরশমণি’ আবার কখনও ‘আলোকের ঝর্ণাধারা’— একের পর এক নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মোহিত করে দেন তিনি। সকলের চোখেমুখেই অবিশ্বাস স্পষ্ট, এই মনুয়াই কি প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর খুনে অভিযুক্ত!

কারা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মনুয়ার মধ্যে প্রতিভা আগে থেকেই ছিল। সংশোধনাগারে বন্দিদের মূল স্রোতে ফেরাতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত রয়েছে। তেমনই রয়েছেন নাচের শিক্ষক। আবার সংশোধনাগারের বন্দিদের লেখা এবং ছবিতে সাজানো সাময়িকী ‘মুক্তমনে’ও প্রকাশিত হয়। কারা আধিকারিক জানালেন, নাচের নিজের প্রতিভা দেখানোর পাশাপাশি মনুয়ার বাংলা সাহিত্যেও জ্ঞান রয়েছে। তা বুঝতে তাঁকেই সাময়িকীটি সম্পাদনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর নাচ মনুয়ার বড্ড প্রিয়। তাঁর নাচের প্রশিক্ষক মেহবুব হাসান বলেন, ‘‘মনুয়ার মধ্যে প্রতিভার প্রকাশ আগে থেকেই ছিল। আমার কাছে সব ছাত্রীই সমান। কিন্তু মনুয়া সব দিকে থেকে এগিয়ে থাকা এক জন ছাত্রী। ওঁর মধ্যে নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠার সমস্ত সম্ভাবনা আছে।’’

জানা গিয়েছে, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকাকালীনই কারা দফতরের উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘দমদম রেডিয়ো’তে রেডিয়ো জকির ভূমিকায় সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছিলেন মনুয়া। মহিলাদের ক্রিকেটে স্কোরারের ভূমিকাতেও ভাল কাজ করেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও সংশোধনাগারে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। ২০২১ সালে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে স্থানান্তরের পরে সেখানেও নানা কর্মসূচিতে যুক্ত থাকার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন মনুয়া। জেল কর্তৃপক্ষের কাছেও মনুয়ার প্রতিভার খবর ছিল। ফলে, আর দেরি হয়নি। বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই চুটিয়ে কাজ শুরু করেন স্বামী হত্যায় যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া মনুয়া। এত দিন তা ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তা জানাজানি হয়ে গেল গোটা বর্ধমানের।

২০১৭ সালের ২ মে রাতে অশোকনগরে নিজের বাড়িতে খুন হন অনুপম সিংহ। সেই মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে স্ত্রী মনুয়া এবং তাঁর প্রেমিক অজিত রায়কে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বারাসত আদালতের চতুর্থ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক বৈষ্ণব সরকার মনুয়া এবং অজিতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। সেই মনুয়াই এখন মঞ্চ মাতাচ্ছেন নাচের প্রতিভা দিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.