এত বিএড ও ডিএলএড কলেজ তৈরি হল কী ভাবে? কী ভাবেই বা মিলল কলেজ খোলার ছাড়পত্র

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে বৃহস্পতিবার রাজ্যের একাধিক বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজে বৃহস্পতিবার তল্লাশি চালায় সিবিআই। এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, এত বিএড ও ডিএলএড কলেজ তৈরি হল কী করে? কী ভাবেই বা সংশ্লিষ্টরা কলেজ খোলার ছাড়পত্র পেল?

এ দিন সিবিআই তল্লাশি চালায় মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়ি ও তার কাছেই তাঁর একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। স্থানীয় সূত্রে খবর, জাফিকুলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ২০০৪-২০০৫ সাল নাগাদ তৈরি হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে কলেজ সংখ্যা ও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ে। শেষ কয়েক বছরে জাফিকুলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি রমরম করে চলেছে। সিবিআই এ দিন সজল আনসারির বাড়িতেও যায়। কান্দির বড়ঞার বাসিন্দা সজলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তৈরি হয়েছে পনেরো বছর আগে। প্রথমে একটি মেয়েদের স্কুল তৈরি হয়েছিল। তার পরে বছর দশেক আগে ধাপে ধাপে বিএড ও ডিএলএড কলেজ তৈরি হয়।

বিধায়ক জাফিকুলের দাবি, ‘‘আমি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করি এবং তা আইনি ভাবেই চালাই।’’ জেলা শিক্ষা দফতরের বক্তব্য, এই ধরনের অনুমতি ও স্বীকৃতির বিষয় কলকাতা থেকেই দেখা হয়।

সূত্রের খবর, এই সব কলেজের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র শর্তাবলি মেনে অনুমতি ও অনুমোদন লাগে। এই শর্তগুলির মধ্যে নানা বিষয় রয়েছে। যার একটি হল, শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন কলেজ খোলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের অনুমতি অবশ্যই দরকার। জাফিকুলের প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই বাম আমলে অনুমোদন পায়। যদিও ডোমকলের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘জাফিকুলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কতটা নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছে ও নিয়ম মেনে চলছে, তা নিয়ে খুবই সন্দেহ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্নীতির আখড়া। ডোমকলের মতো জায়গায় ফার্মাসি ও শিক্ষক শিক্ষণের প্রতিষ্ঠান হঠাৎ তৈরি করার কী প্রয়োজন পড়ল, তাই তো বোঝা যাচ্ছে না।’’ জাফিকুল অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নিয়ম মেনে চলছে। কখনও কোনও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি।’’

কোচবিহারের রাজারহাটের টেঙ্গনমারিতে বিএল এডুকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (বিএড ও ডিএলএড) ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় থেকে ডিএলএড পড়ানো শুরু হল। ২০১৭ সাল থেকে বিএড পড়ানো শুরু হয়। কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, একটি ট্রাস্ট ওই কলেজ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। ওই বোর্ডে রয়েছেন খাগরাবাড়ির ‘কর’ পরিবারের পাঁচ সদস্য। শ্যামল কর, অমল কর, সজল কর, আশিস কর এবং মানসী কর। প্রথম তিন জন সম্পর্কে ভাই, চতুর্থ জন ভাইপো এবং পঞ্চম জন সজলের স্ত্রী। ২০২০ সাল পর্যন্ত শ্যামল ওই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার পর থেকে চেয়ারম্যান রয়েছেন আশিস, সম্পাদক অমল।

এ দিন শ্যামলের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। তাঁর ভাই সজলকে কিছুক্ষণের জন্য আটকও করা হয়। কলেজের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শ্যামলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে শ্যামলের সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। শ্যামল কোথায় থাকেন, তা-ও কেউ জানেন না। এ দিন বহু চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তার পর থেকে কলেজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন সজল। এ দিন সজলকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। কলেজের অফিসার ইন-চার্জ জ্যোতিষ্ক সরকার বলেন, ‘‘আমাদের কলেজের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ নেই। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই আমরা কলেজ চালাচ্ছি। সে সংক্রান্ত সমস্ত নথি রয়েছে।’’

সূত্রের দাবি, মূলত টাকার বিনিময়ে ভুয়ো শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। তা ছাড়া, কলেজে পঠনপাঠনের ‘উপযুক্ত’ পরিকাঠামো নেই বলেও অনেকে দাবি করেন। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, বিভিন্ন বেআইনি পথে ‘উপার্জিত’ টাকাও অনেক ক্ষেত্রে এই কলেজগুলিতে বিনিয়োগ করা হয়।

প্রশ্ন উঠেছে, এর পরেও কলেজগুলি অনুমোদন পেয়েছে কী ভাবে? মাঝে কোনও পুনর্মূল্যায়নও কি হয়নি? এই নিয়ে প্রশাসনের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.